টিম আর্জেন্টিনার আত্মপ্রকাশ

 টিম আর্জেন্টিনা ইতিহাস 


আর্জেন্টিনার নথিভুক্ত প্রথম খেলা ছিলো উরুগুয়ের বিরুদ্ধে। এই খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো মে ১৬, ১৯০১ সালে মোন্তেবিদেওতে এবং এতে আর্জেন্টিনা ৩-২ ব্যবধানে জয় লাভ করে। প্রথম বছরে, প্রীতি খেলায় শুধুমাত্র দক্ষিণ আমেরিকান দলসমূহই বিরুদ্ধে ছিল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যান্য দেশে ভ্রমণের অসুবিধার কারণে। সেই দলের সদস্য ছিলেন, আর ডব্লিউ রুদ, ডব্লিউ লেসলি, এ সি এ্যডিকট, এ এ ম্যাক, এইচ র‌্যাটক্লিফ, ই এল ডুগান, জি ই লেসলি, জে ও অ্যান্ডারসন (চ্যাপ্টার), এস ইউ লিওনার্ড, ই ডিকিনসন এবং জি এন ডিকিনসন। লোমাস অ্যাথলেটিক এবং অ্যালামনাইয়ে অধিকাংশ খেলোয়াড়ের সেই খেলার জন্য ডাক পড়ে, যাদের অনেকেই আর্জেন্টিনার ফুটবল অপেশাদার যুগের সর্বাধিক সফল দলের মধ্যে ছিল।দ্বিতীয় খেলায় একই মাঠে উরুগুয়ের বিপক্ষে ৬-০ ব্যবধানে আর্জেন্টিনা বৃহৎ বিজয় লাভ করে।

দীর্ঘ সময় বিরতি পর ট্রফি 

১৯৩৮ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনটি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। তবে বিভিন্ন কারণে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি। ১৯৩৮ ফিফা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ফ্রান্সে। টানা দ্বিতীয়বার ইউরোপে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবার ফলে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয় আর্জেন্টিনা এবং উরুগুয়ে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় ইতালি, যা ছিল তাদের দ্বিতীয় শিরোপা। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে কয়েক বছর বিশ্বকাপ বন্ধ ছিল। বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫০ সালে ব্রাজিলে। কিন্তু ব্রাজিলীয় ফুটবল সংস্থার সাথে দ্বন্দ্ব্বের কারণে এই বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেনি আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৫৪ সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপেও অংশগ্রহণ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তারা। টানা তিনটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ না করলেও এই সময়ের মধ্য আর্জেন্টিনা ১৯৩৭, ১৯৪১, ১৯৪৫, ১৯৪৬, ১৯৪৭, ১৯৫৫ ও ১৯৫৭ সালে দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জেতে।

মেসিনির্ভরতা ঝেড়ে টিম আর্জেন্টিনার আত্মপ্রকাশ দেখলাম। নীল-সাদার জন্য এটা খুবই ইতিবাচক। এই প্রথম মনে হলো, বিশ্বকাপ নিয়ে যেতে আর্জেন্টিনা সত্যিই তৈরি।

কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি। নাইজেরিয়া ম্যাচে এসে আর্জেন্টিনাকে বেশ উজ্জীবিত লাগল। একটা ফুরফুরে হাওয়া বইল গোটা দলে। শরীরী ভাষায় আক্রমণাত্মক মনোভাব ফুটিয়ে গোটা দল যেন কোরাস তুলেছে মাঠে, ‘কিছু করে দেখাতে হবে’। যেটা প্রথম দুই ম্যাচে সেভাবে পারেনি। তাই নাইজেরিয়া ম্যাচে দলীয় শক্তিটা তুলে ধরার একটা চ্যালেঞ্জও তাড়া করছিল সাবেলার দলকে।
বলা বাহুল্য, সেই চ্যালেঞ্জে উতরে গেছে আর্জেন্টিনা। আক্রমণে এদিন খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ িছল অনেক বেশি। এমনিতে আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগ বেশ তারকাখচিত। কিন্তু মেসি ছাড়া অন্যরা পারছিলেন না আলো ছড়াতে। তাই আর্জেন্টিনাকে মেিসনির্ভর থাকতে হয়েছে। যে কারণে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হয়েছে মাঠে। তারই স্বার্থে কখনো কখনো একটু রয়েসয়ে সামনে এগোতে চেয়েছে আর্জেিন্টনা। দু-একটা ব্যতিক্রম বাদে আর্জেন্টিনার আক্রমণের ধার অনুযায়ী খেলোয়াড়দের উপস্থিতি টের পাইনি সেভাবে। তবে নাইজেরিয়া ম্যাচে সেই দৃশ্য বদল। প্রতিপক্ষের অ্যাটাকিং থার্ডেই নিজেদের খেলাটা বেশি খেলল আর্জেন্টিনা। নাইজেরিয়ার রক্ষণ তাই গোটা ম্যাচেই ব্যস্ত।গ্রুপের শেষ ম্যাচটায় আড়াআড়ি পাসও অনেক কম খেলেছে আর্জেন্টিনা। আড়াআড়ি খেললে সময় বেশি লাগে অাক্রমণ গড়তে। পরশুর আর্জেন্টিনা সামনে পাস খেলেছে অনেক। সামনে কার্যকর পাস খেলার ওপর ম্যাচ পরিিস্থতি অনেকটাই নির্ভর করে। বাতাসে বল রাখা, ব্যাক অব দ্য ডিফেন্ডার খেলা, এগুলোও তুলনামূলক ভালো করেছে। খেলতে খেলতে হঠাৎ করে দিক বদল করে দেওয়াও প্রশংসা পাবে।


ডি মারিয়া ছিলেন বেশ উদ্বুদ্ধ। তাঁর গায়ে বিশ্বকাপের বাতাস লেগেছে তৃতীয় ম্যাচে এসে। গোল পাওয়া উচিত ছিল এই স্ট্রাইকারের। হিগুয়েইনও অন্যদিনের চেয়ে মাঠে তৎপর ছিলেন বেশি। তবে মিস করেছেন, যেটা দলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারত। তার পরও মাঠে সবার একাত্ম থাকা, িনজের দায়িত্ব থেকে কিছু করার চেষ্টা করা, এটাই টিম আর্জেন্টিনার শক্তি তুলে ধরেছে।
মেসি একটু পেছন থেকে মাঝে মাঝে ‘ওয়াক’ করছিলেন। তবে কাজের কাজটা করে দেন ঠিক সময়ে। মেসিকে নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। কোনো বিশেষণই তঁার জন্য যথেষ্ট নয়। দুর্দান্ত েমিসকে পাওয়া গেল নাইজেরিয়া ম্যাচেও। িফ্র-কিকের গোলটা অসাধারণ। এ সত্যিই ভিনগ্রহের ফুটবলার!তবে মেসির পেছনে থাকা রক্ষণ নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে ৈবকি। দু-দুটি গোল খাওয়া কিন্তু ভালো ইঙ্গিত নয়। একটা কারণ মনে হয়, প্রতিপক্ষের সীমানায় বেশি খেলায় রক্ষণ একটু আলগা হয়ে গেছে আর্জেন্টিনার, সেই সুযোগ নিয়েই মুসার দুটি দারুণ গোল। প্রথম গোলটায় পাবলো জাবালেতার ভূমিকা ভালো লাগেনি। তাঁর আরও কার্যকর থাকা দরকার ছিল। রক্ষণে এই যে ফঁাক, সেটা আর্জেন্টিনার জন্য সতর্কবার্তা। মুসার দুটির পর নিশ্চয়ই রক্ষণ নিয়ে বাড়তি কাজ করবেন সাবেলা? তবে দ্বিতীয়ার্ধে রক্ষণের ফাঁকগুলো বন্ধ করে দিয়েছে আর্জেন্টিনা। বড় দল ভুল শুধরে নিতে সময় নেবে না, এটাই স্বাভাবিক। প্রশংসা পাওয়া উচিত নাইজেরিয়ারও। ড্র করতে নামেনি সুপার ইগলরা। একই মাঠে অন্য ম্যাচে কী হচ্ছে, সেটা না দেখে নিজেদের খেলাটাই ওরা খেলল।

তবে ফ্রান্সকে দেখে মনে হলো না জেতার জন্য ক্ষুধার্ত। ইকুয়েডরের সঙ্গে ড্র ম্যাচে বেনজামারা গোটা চারেক গোলেও জিততে পারত, কিন্তু কেন জানি ফ্রান্স দলটাকে দেখে এমন মনে হচ্ছে না ওরা বিশ্বকাপের দাবিদার। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, হল্যান্ডকেই কাপ জেতার মতো লাগছে। পরশুর ম্যাচের পর আর্জেন্টিনাকে নিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে আমার। টিম আর্জেন্টিনার সামর্থ্যটা যে অবশেষে দৃশ্যমান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Ads3

Ads dawun