মাদকাসক্ত বোঝা গেলে কী করণীয়
ডা. আলী আসকর কোরেশী বলছেন, চিৎকার চেঁচামেচি বা মারধর না করে এক্ষেত্রে একটাই পদক্ষেপ, তাকে সরাসরি একজন মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া। মানসিক চিকিৎসকদের মধ্যে অনেকে রয়েছেন যাদের মাদকাসক্তি নিরাময়ে বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তাদের কাছে যেতে পারলে আরো ভালো।
এক্ষেত্রে ওই চিকিৎসক রোগীকে বিশ্লেষণ করে তার চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করেন।
মি. কোরেশী বলছেন, ছোটখাটো ক্ষেত্রে বা প্রথম দিকে হয়তো ওষুধ আর নিয়মিত ফলোআপে মাদকাসক্তি দূর করা যায়। কিন্তু এই আসক্তি পুরনো বা গভীর হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়।
তিনি জানান, বাংলাদেশে মূলত দুই পদ্ধতিতে মাদকাসক্তির চিকিৎসা হয়। একটি হচ্ছে রিহ্যাব পদ্ধতি। সাধারণত হেরোইন, প্যাথেড্রিন, ফেন্সিডিল বা মরফিন আসক্তদের এ ধরণের পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়। এক্ষেত্রে রোগীকে দুই থেকে তিন মাস রিহ্যাব সেন্টারে আটকে রাখা হয়। নিয়মিত নেশা করতে না পেরে একসময় রোগীর নেশার প্রবণতা কেটে যায়। পাশাপাশি মানসিক পরামর্শে তিনি আসক্তি কাটিয়ে ওঠেন।
পরিবারের সহায়তা
পরিবারের কোন স্বজন মাদকাসক্ত হয়ে উঠলে অনেক সময় পরিবারের সদস্যরা তাকে এড়িয়ে চলেন বা খারাপ ব্যবহার করেন।
ড. কোরেশী বলছেন, আসলে এ সময়টাতেই পরিবারের সহমর্মিতা তার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার। চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা তার ভুল পথে যাওয়া ঠেকাতে পারে।
রিহ্যাব সেন্টার
আমার হোম বাংলাদেশের সেরা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার । মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ছাড়াও মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাই এই রিহ্যাব সেন্টারের প্রধান উদ্দেশ্য। কর্মী এবং ডাক্তারদের বন্ধু-সুলভ ও সহযোগিতাপূর্ণ আচরণের জন্য রোগীরা ঘরোয়া পরিবেশের মত স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এছাড়াও তারা এখানে উন্নতমানের আবাসিক সুবিধাও পেয়ে থাকে।
রিহ্যাব সেন্টারে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়োগ দেয়া নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ তবে পরবর্তী ধাপ হল উন্নত সুবিধা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সম্পন্ন আবাসিক সুবিধার ব্যবস্থা করা যা মাদকাসক্তদের একটি সাধারণ দাবি।
আমার হোম সেরা মাদক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার হিসেবে পরিচিত যেখানে এমন চিকিৎসকদের নিয়োগ দেয়া হয় যারা কেবল মাদকের অপব্যবহারের চিকিৎসাই করেন না তারা মনোরোগ বিশেষজ্ঞও বটে। মাদকের অপব্যবহারের ক্ষেত্রে উপযুক্ত মানসিক স্বাস্থ্য সেবা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাদকাসক্তির ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেটা অনেক চিকিৎসকরা বা রিহ্যাব সেন্টারগুলো বুঝতে পারে না।
কোনও ব্যক্তি কখনো ঘুম থেকে উঠে মাদকে আসক্ত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় না। মাদকদ্রব্যে মানুষের কেন এত আসক্তি তার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যা আমরা আগে আলোচনা করেছি। তবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার টি হল মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এমন একটি রোগ যা কাউকে মানসিক, শারীরিক বা অনুভূতির দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে তাদের নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না এবং তাদের মস্তিষ্কে হরমোনের ভারসাম্যহীণতা দেখা দেয়। এটি মাদকের প্রতি আসক্তি দীর্ঘ সময়ের জন্য আবার কখনো স্থায়ী রূপ লাভ কর। তাই একজন আসক্ত ব্যক্তির জন্য একজন ভালো চিকিৎসক ও ভালো পরিবেশের পাশাপাশি সঠিক চিকিৎসাও প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে একজন রোগীকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে কখনো কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসও থাকতে হতে পারে। এটি সাধারণত কোন ব্যক্তির মাদকের আসক্তির স্তরের উপর নির্ভর করে। এই সবকিছু বিবেচনা করে আপনি বলতে পারেন রোগীদের জন্য ভালো চিকিৎসক এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন আবাসিক পরিবেশও প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের আমার হোম রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার আপনার প্রয়োজন বুঝতে পারে এবং সেভাবে চিকিৎসা করার চেষ্টা করে।
কী কী লক্ষণ দেখলে সতর্ক হওয়া উচিত
বাংলাদেশের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র 'মুক্তি'র প্রধান আলি আসকার কোরেশী বলছেন, ''কেউ মাদকাসক্ত হয়ে উঠলে একদম শুরুর দিকে বুঝা আসলে একটু শক্ত। তারপরেও বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে, যা দেখা গেলে সন্তানের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।
যদি দেখা যায় যে, সন্তানের আচার আচরণে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যে শান্তশিষ্ট ছেলেটা হঠাৎ করে অপরিচিতের মতো আচরণ করছে। ঘুমের প্যাটার্ন পাল্টে যাচ্ছে। আগে যে সকালে স্কুলে যেতো, এখন সে নানা অজুহাতে স্কুলে যেতে চাইছে না। বিভিন্ন অজুহাতে টাকা চাইছে যে, আজকে এটা কিনতে হবে, কাল অন্য কাজে টাকা লাগবে। তখন সতর্ক হতে হবে।
আরো কিছু লক্ষণের মধ্যে রয়েছে মন-মেজাজের হঠাৎ পরিবর্তন, ঘুম থেকে উঠে মেজাজ খারাপ করা, খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর না থাকা বা অতিরিক্ত ঘুমানো, রাতে জেগে দিনে ঘুমানো, এ ধরণের প্রবণতা দেখা গেলে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। পরিবারের কোন সদস্য ঘন ঘন অতিরিক্ত টাকা দাবি করলে, প্রাইভেট বা স্কুলের খরচের নাম করে বারবার টাকা চাইলেও সতর্ক হতে হবে।
তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, এসব ক্ষেত্রে সন্তান কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মিশছে, আসলেই স্কুলে বা প্রাইভেটে যাচ্ছে কিনা, এসব অভিভাবকদের নজরদারি করতে হবে। স্কুলের বেতন থেকে শুরু করে প্রাইভেট টিউটরের বেতনও অভিভাবকদের নিজেদের দেয়া উচিত, কারণ অনেক সময় প্রাইভেট বা স্কুলের নাম করে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে তারা নেশা করে।
মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মিথ্যা বলা বেড়ে যাওয়া, দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া বা অনেক সময় চুরির অভ্যাস তৈরি হওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। বন্ধুদের মধ্যে যদি মাদকাসক্ত কেউ থাকে, তাহলেও তার মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত কয়েক সপ্তাহের অভিযানে এ পর্যন্ত অন্তত ৩০জন নিহত হয়েছে আর আটক হয়েছে কয়েকশো ব্যক্তি।
কিন্তু পরিবারের কোন সদস্য মাদকাসক্ত হয়ে উঠলে অন্যরা সেটি কীভাবে বুঝবেন? বাংলাদেশে এ ধরণের সমস্যায় চিকিৎসার কী ব্যবস্থা রয়েছে?
উপসংহার
আপনি যখন আপনার কোনও প্রিয়জনকে কোনও রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিবেন তখন আপনার অনেক কিছু সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে। তাছাড়া ভালো চিকিৎসার জন্য আপনাকে এমন একটি রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার খুঁজে বের করতে হবে যেখানে আপনার প্রিয়জন নিরাপদ বোধ করবে। কারণ দ্রুত আরোগ্য লাভ করা তখনই সম্ভব হবে যখন ঐ পরিবেশটি রোগীর জন্য যথেষ্ট নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দ্যের হবে। মানসিক প্রভাব এই ক্ষেত্রে একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে। সুতরাং, সর্বদা এমন একটি রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার বাছাই করুন যেটা আপনার প্রয়োজনের সাথে মানানসই হয়।