শীতের কবিতা
শীতের কবিতা বলতে শীতের অনুভূতি বা পরিবেশ নিয়ে যে কবিতা লেখা হয় তাকে শীতের কবিতা বলে। শীতের কবিতাকে শীতের সকালের কবিতা , শীতের বিকেলের কবিতা, শীতের দুপুরের কবিতা শীতের রাতের কবিতা ইত্যাদি নামেও অনেকে ভাগ করে থাকে। তবে শীতের কবিতার মূল বিষয়বস্তু হলো শীত। তা হতে পারে শীতের সকাল, শীতের বিকেল, শীতের রাত অথবা শীতকালের পরিবেশ, এর প্রভাব ইত্যাদি যেকোন বিষয় নিয়েই হতে পারে শীতের কবিতা। পৌষ ও মাঘকে সাধারণত শীতকাল বলা হয়ে থাকে। তবে প্রকৃতিপক্ষে শীতকাল থাকে কমপক্ষে চার মাস।
এইসব শীতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে
এই সব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে;
বাইরে হয়তো শিশির ঝরছে, কিংবা পাতা,
কিংবা প্যাঁচার গান; সেও শিশিরের মতো,
হলুদ পাতার মতো।
শহর ও গ্রামের দূর মোহনায় সিংহের হুঙ্কার
শোনা যাচ্ছে -
সার্কাসের ব্যথিত সিংহের।
এদিকে কোকিল ডাকছে – পউষের মধ্য
রাতে;
কোনো-একদিন বসন্ত আসবে ব’লে?
কোনো-একদিন বসন্ত ছিলো, তারই
পিপাসিত প্রচার?
--------- জীবনানন্দ দাশ--------
শীতের প্রেমের কবিতা
শীতের ভালবাসা
– মোঃ আব্দুল্লাহ্ আল মামুন
তুমি কি সেই কথা মনে রেখেছ?
মনে রেখেছ কি ?
সেই শীতের প্রেম লগ্ন।
উষ্ণ আর গভীর প্রেম ছিল সেটি।
আজ তুমি নেই
এই খবর চারদিকে কেউ জানে না।
আমিও বসে আছি।
রাতে এখন কম্বলের নীচে;
একা একা মনে অশান্ত ভাবনা;
চারদিকে অশান্ত সব স্বপ্ন —
ভির করেছে মনের কোণে
লেপের উষ্ণতা যেন কমে গেছে
কম্বলে কিছু ঠান্ডা ডুকে গেল
এই বুঝি কেউ কিছু বলছে
সেই কণ্ঠ যেন চীর চেনা
শীতের কম্বলের আচরণ
বার বার বলে
তুমি নেই ।
শীতের রাত।
একা একা কাটে না সময়।
কম্বলের আচরণ কেমন বৈরি হয়ে গেছে ।
কেমন যেন অচেনা আচরণ
সব কিছুতেই যেন কিছু নেই
নেই তুমি নেই।
নেই সেই উষ্ণ রাত।
নেই বুকে নরম সেই হাত
নেই তুমি নেই।।
কেউ নেই পাশে।
শীতের সকালের কবিতা
শীতের সকাল
------আবু জাফর-----
সকালে সোনার আলো করে ঝিকমিক,
সবুজ ঘাসের শিশির করে চিক চিক ।
ক্ষণে ক্ষণে শীত আর শীতল অনুভূতি,
জানালার ধারে এসে, কাপে প্রজাপতি।
সোনা নয় রুপা নয় জ্বলে ঝিকি মিকি,
বিন্দু বিন্দু শিশির গুলো চেয়ে চেয়ে দেখি।
সাদাকাল নীল দিয়ে আকাশ কেমন সাজে,
আমার মনে গহীন বনে সুরের কঙ্কন বাজে।
চারিদিকে পাখিসব করে রব কল-কাকলী,
সূর্যের আলো মেঘের সাথে করছে মিতালী।
কুয়াশায় ঢাকা ভোরে পড়ছে শিশির ঘাসে,
সূর্য মামা হেলে দূলে দেরী করে আসে।
শীতের সকাল
- -------আবু জাফর--------
সকালে সোনার আলো করে ঝিকমিক,
সবুজ ঘাসের শিশির করে চিক চিক ।
ক্ষণে ক্ষণে শীত আর শীতল অনুভূতি,
জানালার ধারে এসে, কাপে প্রজাপতি।
সোনা নয় রুপা নয় জ্বলে ঝিকি মিকি,
বিন্দু বিন্দু শিশির গুলো চেয়ে চেয়ে দেখি।
সাদাকাল নীল দিয়ে আকাশ কেমন সাজে,
আমার মনে গহীন বনে সুরের কঙ্কন বাজে।
চারিদিকে পাখিসব করে রব কল-কাকলী,
সূর্যের আলো মেঘের সাথে করছে মিতালী।
কুয়াশায় ঢাকা ভোরে পড়ছে শিশির ঘাসে,
সূর্য মামা হেলে দূলে দেরী করে আসে।
শীতের সকালের প্রেমের কবিতা
শিশির ভেজা সকালের কবিতা
শীত এলে মনে হয় – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মাঠ থেকে উঠে ওরা এখন গোলায় শুয়ে আছে
সোনালী ফসল, কত রোদ ও বৃষ্টির স্বপ্ন যেন
স্নেহ লেগে আছে
লাউমাচায়, গরু ও গরুর ভর্তা সবান্ধব পুকুরের পাশে
মুখে বিক্ষয়ের দুঃখে দীক্ষা যাহারে দিলে,
সব দিকে যার বাহুল্য ঘুচাইলে,
প্রাচুর্যে তারি হল আজি অধিকার।
দক্ষিণবায়ু এই বলে বার বার,
বাঁধন-সিদ্ধ যে-জন তাহারি দ্বার
খুলিবে সকলখানে।
কঠিন করিয়া রচিলে পত্রখানি
রসভারে তাই হবে না তাহার হানি,
লুঠি লও ধন, মনে মনে এই জানি,
দৈন্য পুরিবে দানে।
44444433343
শীতের বিদায় – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তুঙ্গ তোমার ধবলশৃঙ্গশিরে
উদাসীন শীত, যেতে চাও বুঝি ফিরে?
চিন্তা কি নাই সঁপিতে রাজ্যভার
নবীনের হাতে, চপল চিত্ত যার।
হেলায় যে-জন ফেলায় সকল তার
অমিত দানের বেগে?
দণ্ড তোমার তার হাতে বেণু হবে,
প্রতাপের দাপ মিলাবে গানের রবে,
শাসন ভুলিয়া মিলনের উৎসবে
জাগাবে, রহিবে জেগে।
সে যে মুছে দিবে তোমার আঘাতচিহ্ন,
কঠোর বাঁধন করিবে ছিন্ন ছিন্ন।
এতদিন তুমি বনের মজ্জামাঝে
বন্দী রেখেছ যৌবনে কোন্ কাজে,
ছাড়া পেয়ে আজ কত অপরূপ সাজে
বাহিরিবে ফুলে দলে।
তব আসনের সম্মুখে যার বাণী
আবদ্ধ ছিল বহুকাল ভয় মানি’
কণ্ঠ তাহার বাতাসেরে দিবে হানি’
বিচিত্র কোলাহলে।
তোমার নিয়মে বিবর্ণ ছিল সজ্জা,
নগ্ন তরুর শাখা পেত তাই লজ্জা।
তাহার আদেশে আজি নিখিলের বেশে
নীল পীত রাঙা নানা রঙ ফিরে এসে,
আকাশের আঁখি ডুবাইবে রসাবেশে
জাগাইবে মত্ততা।
সম্পদ তুমি যার যত নিলে হরি’
তার বহুগুণ ও যে দিতে চায় ভরি,
পল্লবে যার ক্ষতি ঘটেছিল ঝরি,
ফুল পাবে সেই লতা।
শীতের সকাল নিয়ে কবিতা
ওগো শীত – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ওগো শীত, ওগো শুভ্র, হে তীব্র নির্মম,
তোমার উত্তরবায়ু দুরন্ত দুর্দম
অরণ্যের বক্ষ হানে। বনস্পতি যত
থর থর কম্পমান, শীর্ষ করি নত
আদেশ-নির্ঘোষ তব মানে। “জীর্ণতার
মোহবন্ধ ছিন্ন করো’ এ বাক্য তোমার
ফিরিছে প্রচার করি জয়ডঙ্কা তব
দিকে দিকে। কুঞ্জে কুঞ্জে মৃত্যুর বিপ্লব
করিছে বিকীর্ণ শীর্ণ পর্ণ রাশি রাশি
শূন্য নগ্ন করি শাখা, নিঃশেষে বিনাশি
অকাল-পুষ্পের দুঃসাহস।
হে নির্মল,
সংশয়-উদ্বিগ্ন চিত্তে পূর্ণ করো বল।
মৃত্যু-অঞ্জলিতে ভরো অমৃতের ধারা,
ভীষণের স্পর্শঘাতে করো শঙ্কাহারা,
শূন্য করি দাও মন; সর্বস্বান্ত ক্ষতি
অন্তরে ধরুক শান্ত উদাত্ত মুরতি,
হে বৈরাগী। অতীতের আবর্জনাভার,
সঞ্চিত লাঞ্ছনা গ্লানি শ্রান্তি ভ্রান্তি তার
সম্মার্জন করি দাও। বসন্তের কবি
শূন্যতার শুভ্র পত্রে পূর্ণতার ছবি
লেখে আসি’, সে-শূন্য তোমারি আয়োজন,
সেইমতো মোর চিত্তে পূর্ণের আসন
মুক্ত করো রুদ্র-হস্তে; কুজ্ঝটিকারাশি
রাখুক পুঞ্জিত করি প্রসন্নের হাসি।
বাজুক তোমার শঙ্খ মোর বক্ষতলে
নিঃশঙ্ক দুর্জয়। কঠোর উদগ্রবলে
দুর্বলেরে করো তিরস্কার; অট্টহাসে
নিষ্ঠুর ভাগ্যেরে পরিহাসো; হিমশ্বাসে
আরাম করুক ধূলিসাৎ। হে নির্মম,
গর্বহরা, সর্বনাশা, নমো নমো নমঃ।
কবি গুরু রাবিন্দ্রনাথপর কবিতা গুলো
পৌষের শীত – মুকুন্দরাম চক্রবর্তী
পউষের প্রবল শীত সুখী যেজন।
তুলি পাড়ি আছারি শীতের নিবারণ ॥
ফুল্লরার কত আছে কর্মের বিপাক।
মাঘ মাসে কাননে তুলিতে নাহি শাক ॥’