জাফরানের উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা

জাফরান



জাফরান (গাছ) ফুল থেকে সংগৃহীত এক প্রকারের মশলা যা সাধারণভাবে "জাফরান ক্রোকাস" নামে পরিচিত। জাফরন ফুলের প্রাণবন্ত গাঢ় লাল রঙের এবং শৈলীর গর্ভমুণ্ড, যাকে জাফরন আঁশ বলা হয়। সংগ্রহ এবং শুকানোর মাধ্যমে জাফরন মশলা তৈরি করা হয় যা প্রধানত খাবারের স্বাদ এবং রঙের জন্য ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ওজন এর দিকে দিয়ে জাফরন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মসলা। যদিও জাফরনের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে কিছু দ্বিমত আছে , তারপরেও এটা ধারণা করা হয় যে, জাফরন ইরান থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। তারপরেও,গ্রীস এবং মেসোপটেমিয়া  অঞ্চলকে জাফরনের উৎপত্তির সম্ভাব্য অঞ্চল হিসাবে ধারণা করা হয়। সি   স্যাটিভাস সম্ভবত ক্রোকাস কার্টরাইটনাস এর একটি ট্রিপলয়েড ফর্ম। জাফরন ক্রোকাস ধীরে ধীরে ইউরেশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পরেছিল এবং পরে উত্তর আফ্রিকাউত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়া অংশে ছড়িয়ে পরেছিল।

জাফরানের স্বাদ এবং খড়ের মতো সুবাসের উৎপত্তি হয় রাসায়নিক জৈব যৌগ পিক্রক্রোছিন এবং সাফ্রানল থেকে। আবার জাফরনে ক্যারোটিনয়েড রঙ্গক এবং ক্রসিন রয়েছে, যা খাবার এবং কাপড়ে সোনালি-হলুদ রঙ এর সৃষ্টি করে। ৭ম শতাব্দীতে অ্যাসিরিয়ান রাজা আশুরবানিপাল দ্বারা সঙ্কলন করা উদ্ভিদসংক্রান্ত গ্রন্থে জাফরনের ইতিহাসের নথীভুক্তি পাওয়া যায় এবং চার হাজার বছরের বেশি ধরে এর ব্যবসা ও ব্যবহার চালু রয়েছে । বর্তমানে বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ৯০% অংশ ইরানে উৎপাদিত হচ্ছে। 

জাফরানের উপকারিতা 

 ১) জাফরানে রয়েছে বিস্ময়কর রোগ নিরাময় ক্ষমতা। মাত্র ১ চিমটি জাফরান আপনাকে প্রায় ১৫টি শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। জাফরানে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদপিণ্ডের সমস্যাজনিত রোগ দূর করে। ২) হজমে সমস্যা এবং হজম সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে জাফরান

৩) জাফরানের পটাশিয়াম আমাদের দেহে নতুন কোষ গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সারিয়ে তুলতে সহায়তা করে।

৪) এর নানা উপাদান আমাদের মস্তিষ্ককে রিলাক্স (Relax) করতে সহায়তা করে, এতে করে মানসিক চাপ ও বিষন্নতা জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

৫) জাফরানের ক্রোসিন (Crocin) নামক উপাদানটি অতিরিক্ত জ্বর কমাতে সহায়তা করে।

৬) নিয়মিত জাফরান সেবনে শ্বাস প্রশ্বাসের নানা ধরনের সমস্যা যেমন অ্যাজমা (Asthma)পারটুসিস (Pertussis), কাশি এবং বসে যাওয়া কফ দূর করতে সহায়তা করে।

হরতকি গুনাগুন

৭) মেয়েদের মাসিকের অস্বস্তিকর ব্যথা এবং মাসিক শুরুর আগের অস্বস্তি দূর করতে জাফরানের জুড়ি নেই।

৮) জাফরানের রয়েছে অনিদ্রা সমস্যা দূর করার জাদুকরী ক্ষমতা। ঘুমোতে যাওয়ার আগে গরম দুধে সামান্য জাফরান মিশিয়ে পান করলে অনিদ্রা সমস্যা দূর হবে।

৯) সামান্য একটু জাফরান নিয়ে মাড়িতে ম্যাসাজ করলে মাড়ি, দাঁত এবং জিহ্বার নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

১০) গবেষণায় দেখা যায় জাফরান দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে এবং চোখের ছানি পড়া সমস্যা প্রতিরোধেও কাজ করে।

১১) জাফরানের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান বাতের ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা এবং দুর্বলতা দূর করতে অব্যর্থ ঔষুধ।

১২) অ্যাসিডিটির (Acidity) সমস্যা থেকে রেহাই দিতে পারে সামান্য একটুখানি জাফরান।

১৩) জাফরান দেহের কোলেস্টেরল (Cholesterol) এবং ট্রাইগ্লিসারাইড (Triglyceride) নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

১৪) মস্তিস্কের গঠন উন্নত করতে জাফরানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তা ক্ষমতা উন্নত করতে এটি খুবই কার্যকরী।

১৫) এটি আলজাইমার (Alzheimer) এবং পার্কিনসন (Parkinson) রোগ থেকে দূরে রেখে অক্সিডেটিভ (Oxidative) স্ট্রেস থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে বাঁচায়।

১৬) কিডনি, যকৃৎ এবং মুত্রথলির রোগ থেকে মুক্তি দেয় জাফরান। ক্যান্সার ও টিউমার নিরাময়েও জাফরান খুবই কার্যকরী।

এছাড়াও আমাদের প্রত্যেকেরই প্রতিদিন ১ গ্লাস দুধের সাথে কয়কটি জাফরান মিশিয়ে খাওয়া উচিত। এতে আমাদের অজানা অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ১ গ্লাস জাফরান মিল্ক আপনার বাচ্চার মস্তিষ্ক সক্রিয় করতে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে।এছাড়া ভেতর থেকে ত্বক উজ্জ্বল করতে চাইলেও দুধের সাথে জাফরান মিক্স করে খান। কারণ ত্বকের বাহিরে যা কিছুই মাখি না কেনো ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা আমাদের সবার চাওয়া থাকে। জাফরান ত্বকে বলিরেখা দূর করতেও সহায়তা করে। এছাড়াও  দুধের সঙ্গে জাফরান মিশিয়ে মাথায় লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

ত্বকের যত্নে জাফরানের ব্যবহার 

স্যাফরন বা জাফরানের সঠিক কিছু ব্যবহার আছে। আসুন স্টেপ বাই স্টেপ জেনে নেই এর সঠিক ব্যবহার।

১) জাফরান ও চন্দন মাস্ক

প্রস্তুত প্রণালী  

  • একটি পাত্রে ৪ চা চামচ দুধের মধ্যে জাফরান দিয়ে জাফরানের হলুদ রঙ আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
  • হলুদ রঙ আসলে এর সাথে চন্দন মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট বানিয়ে পুরো ফেইসে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট।

এই মাস্কটি স্কিনকে এক্সফোলিয়েট (Exfoliate) করে পরিষ্কার করবে এবং ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল করবে। এটি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করলেই কার্যকরী ফল পাওয়া যাবে।

২) ব্রণ দূর করতে

  • প্রথমে জাফরান আর কাঁচা দুধ মিশিয়ে দুই ঘন্টা রেখে দিন।
  • এবার মিশ্রণটি ফেইসে লাগিয়ে একটু ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

সপ্তাহে ১-২ ব্যবহার করলে ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

জাফরান ব্যবহারের নিয়ম

ঘুমোতে যাওয়ার আগে গরম দুধে সামান্য জাফরান মিশিয়ে পান করলে অনিদ্রা সমস্যা দূর হবে। ৯) সামান্য একটু জাফরান নিয়ে মাড়িতে ম্যাসাজ করলে মাড়ি, দাঁত এবং জিহ্বার নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। ... ১১) জাফরানের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান বাতের ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, মাংসপেশির ব্যথা এবং দুর্বলতা দূর করতে অব্যর্থ ঔষুধ।

জাফরান কীভাবে তৈরি হয়
জাফরান গাছের ফুল ফোটার পর সংগ্রহ শুকানোর মাধ্যমে জাফরন মশলা তৈরি করা হয় যা প্রধানত খাবারের স্বাদ এবং রঙের জন্য ব্যবহার করা। জাফরান ফুলের পাপ‌ড়ি বেগুণী র‌ঙের । এর ভিত‌রে থা‌কে লম্বা পরাগ দন্ড। এ দন্ডের রঙ হলুদ এবন কমলা মিশ্রনে জাফরা‌নি বর্ণের হয়

জাফরানের তেল

জাফরান হেয়ার অয়েল জাফরানের নির্যাসসহ ১০টি বিরল অসাধারন উপাদান দিয়ে তৈরী হয় যা চুলের জন্য খুবই কার্যকর। এটি চুলকে ভেতর থেকে শক্ত করে, চুলে পুষ্টি সরবরাহ করে ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। তাই চুল পড়া বন্ধ করতে এবং চুল সতেজ, ঘন, কাল ও উজ্জল করতে জাফরান হেয়ার অয়েল ব্যবহার করুন।

জাফরানের তেল বানানোর পদ্ধতি 

একটা পাত্রে পানি দিয়ে একটা স্টান্ড বসিয়ে তার ভেতর উক্ত উপকরণের বাটি বসিয়ে হালকা আচে জ্বাল দিতে হবে। ৮-১০ মিনিট পর নামিয়ে নিয়ে এটি ছেকে নিতে হবে। এরপর এর ভেতর আর কিছু জাফরান দানা মিশিয়ে নিয়ে একটা কাচের বোতলে ভরে সংরক্ষণ করতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন এই তেল ব্যবহার করুন।

জাফরান তেলের উপকারিতা

চুল শক্ত ও মজবুত করে। এই ভেষজ উপাদানগুলি দ্রুত এবং সহজেই চুল এবং চুলের উপাদানগুলিতে প্রবেশ করে এবং চুল এবং মাথার ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। ... এটি চুলকে ভেতর থেকে শক্ত করে, চুলে পুষ্টি সরবরাহ করে ফলে চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

জাফরান তেল চেনার উপায়

প্রথমেই মনে রাখতে হবে জাফরান অয়েল যদি অরিজিনাল হলোগ্রামের সাথে সেইম টু সেইম না মিলে তাহলে সেটা মাস্ট নকল। অরিজিনাল জাফরান অয়েলের হলোগ্রাম আর নকল টার হলোগ্রামের মাঝে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। একটু মনযোগ সহকারে দুটি হলোগ্রামের ছবি লক্ষ করলে যেকেউ খুব সহজে পার্থক্য বুঝতে পারবে।

জাফরান খাওয়ার নিয়ম 

এছাড়াও আমাদের প্রত্যেকেরই প্রতিদিন ১ গ্লাস দুধের সাথে কয়কটি জাফরান মিশিয়ে খাওয়া উচিত। এতে আমাদের অজানা অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ১ গ্লাস জাফরান মিল্ক আপনার বাচ্চার মস্তিষ্ক সক্রিয় করতে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে। এছাড়া ভেতর থেকে ত্বক উজ্জ্বল করতে চাইলেও দুধের সাথে জাফরান মিক্স করে খান।

গর্ভাবস্থায় জাফরান

জাফরান গর্ভাবস্থায় দুর্দান্ত, কারণ এটি ইতিবাচক আবেগকে উৎসাহ দেয় এবং কিছু ঔষধি গুণাবলী ধারণ করে যা গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলির সাথে মোকাবেলায় সহায়তা করে। জাফরান উদ্বেগ, স্ট্রেস ও পেট ব্যথার অনুভূতিগুলির মোকাবেলায় সহায়তা করে এবং প্রায়শই গর্ভবতী মহিলাদেরকে এর বহু গুণাবলীর জন্য সুপারিশ করা হয়।

জাফরানের দাম

এই উদ্ভিদ থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান মসলা উৎপাদন করা হয়। এই মসলার নামও জাফরান। ... ১ কেজি জাফরানের গড় দাম বাংলাদেশী মূদ্রায় প্রায় চার লাখ টাকা । ৪৫০ গ্রাম জাফরান তৈরির জন্য প্রায় ৭৫ হাজার ফুল প্রয়োজন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Ads3

Ads dawun