কফির গুনাগুন ও উপকারতা
কফি (ইংরেজি: Coffee) বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় পানীয়। পানির সাথে ফুটিয়ে রান্না করা "কফি বীজ" নামে পরিচিত এক প্রকার বীজ পুড়িয়ে গুঁড়ো মিশিয়ে কফি তৈরি করা হয়। এই বীজ কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ। প্রায় ৭০টি দেশে এই ফলের গাছ জন্মে। সবুজ কফি বিশ্বের সব থেকে বেশি বিক্রীত কৃষিপণ্যের মধ্যে একটি। কফিতে ক্যাফেইন নামক এক প্রকার উত্তেজক পদার্থ রয়েছে। ৮ আউন্স কফিতে প্রায় ১৩৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। কফির উপাদান ক্যাফেইনের জন্যে কফি মানুষের উপর উত্তেজক প্রভাব ফেলে ও উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এখন, চায়ের পর কফি বিশ্বের অত্যধিক জনপ্রিয় পানীয়।
কফি উৎপাদন
কফি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিক্রিত পণ্য (জ্বালানী তেলের পরে) এবং বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বেশি পানকৃত পানীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৯৮-২০০০ সালের মধ্যে ৬.৭ মিলিয়ন টন কফি উৎপন্ন হয়েছে। ২০১০ সাল নাগাদ কফির উৎপাদন বেড়ে ৭ মিলিয়ন টনে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বের সর্বত্র ব্যাপকভাবে প্রচলিত উত্তেজক পানীয় হিসেবে এর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। ১৯৯৯ সালের হিসেব অনুযায়ী আমেরিকার নাগরিকগণ প্রতিদিন গড়ে ৩.৫ কাপ কফি পানীয়রূপে গ্রহণ করে থাকেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ নিয়মিত কফি পান করে থাকেন এবং তারা গড়ে প্রতিদিন ৩ কাপ কফি পান করেন।
কফির ইতিহাস
৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ কফি পান করে আসছে। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কফি পানের প্রমাণ পাওয়া যায় পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইথিওপিয়া।
কফির স্বাস্থ্যগুন
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে কফি লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ক্যান্সার রোধ করে। এতে থাকা অধিক পরিমানে ক্যাফেইন নিম্ন রক্তচাপ জাতীয় সমস্যার জন্যে উপকারী। তবে প্রয়োজনের তুলনায় এটি অধিক পরিমাণে গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে এবং যাদের উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
কফি দিবস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাৎসরিকভাবে ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে জাতীয় কফি দিবস পালন করা হয়।
কফি আবিষ্কারের ইতিহাস
ইথিওপিয়ায় ছাগলের মাধ্যমে আবিষ্কার হয়েছিল কফি! পুরোনো কিংবদন্তী অনুযায়ী, নবম শতকে কালদি নামের একজন ছাগল পালক প্রথম তার ছাগলদের বেরি জাতীয় গাছ থেকে ফল খেতে দেখে। পরবর্তীতে সে লক্ষ্য করে যে তার ছাগলগুলো সারারাত না ঘুমিয়ে পার করে দেয়।
কফি খেলে কী হয়
অতিরিক্ত কফি খেলে কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্ষম ব্যহত হতে পারে। ... কফি শরীরে উষ্ণ উত্তেজক প্রভাব ফেলে বলে জানা যায়। এটি আমাদের শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে, হজমকে উদ্দীপিত করতে পারে ও রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে। কফি বিভিন্ন অসুখের দাওয়াই হতে পারে, তবে যদি এটি অল্প পরিমাণে খাওয়া হয়।
চিনি ছাড়া কফি খাওয়ার উপকারিতা
পেটের সমস্যার জন্য বেশ উপকারী ব্ল্যাক কফি। চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফি অন্তত তিন কাপ দিনে খেতে পারলে শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বেরিয়ে যায়। ... আপনার শরীরে যে পরিমাণ মেটাবলিজম হয় তার থেকে অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি বিপাক ক্রিয়া বাড়ে। এতে ঘাম বেশি হয়।
ব্ল্যাক কফি খাওয়ার নিয়ম
ব্ল্যাক কফির সঙ্গে যদি সামান্য মধু আর লেবু যোগ করে খেতে পারেন, তাহলে যেমন স্বাদ বাড়ে তেমনই তা ওজন কমানোর জন্য উপকারী। ব্ল্যাক কফিতে থাকে ক্যাফিন যা খুব দ্রুত বিপাকের ক্রিয়াকলাপ বাড়ায় এবং আমাদের শরীরের শক্তির জোগান দেয়। ফলে খিদেও কমায়। খালি পেটে কফি নয়-তবে খালি পেটে বা একদম সকালে কফি না খাওয়াই ভালো।
স্লিম ফিট কফি খাওয়ার নিয়ম
সকালে ব্যা. ামের পর খালি পেটেই খান গ্রিন কফি। এই কফি খাওয়ার অন্তত ১০ মিনিট পর অন্য কিছু খাবেন।
কফি উৎপাদনে কোন দেশ এগিয়ে
আন্তর্জাতিক কফি সংস্থার মতে, ফিনল্যান্ডের অধিবাসীরা গড়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কফি পান করে থাকে।
কফি চাষ কোথায় হয়
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ ফুট ওপরে যেকোনো মাটিতে কফি চাষ করা সম্ভব। তবে পাহাড়ি, উপত্যকা ও ঝরণার পাশের জমি এবং যেসব জায়গায় লবণাক্ততা নেই সেসব জমি কফি চাষের উপযোগী। এ ছাড়া রাবার বাগানের ফাঁকে ফাঁকে লাগানো যায় কফির চারা। বাড়ির আঙ্গিনা, ফুলের টব কিংবা বাড়ির ছাদেও কফির চাষ সম্ভব।
কফি কীভাবে তৈরি হয়
পানির সাথে ফুটিয়ে রান্না করা "কফি বীজ" নামে পরিচিত এক প্রকার বীজ পুড়িয়ে গুঁড়ো মিশিয়ে কফি তৈরি করা হয়। এই বীজ কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ। প্রায় ৭০টি দেশে এই ফলের গাছ জন্মে। সবুজ কফি বিশ্বের সব থেকে বেশি বিক্রীত কৃষিপণ্যের মধ্যে একটি।
কফি চাষ পদ্ধতি
প্রথমে পরিপক্ব, পুষ্ট, বালাইমুক্ত বীজ সংগ্র্রহ করে ফলের খোসা ছাড়িয়ে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে ফল থেকে বীজ আলাদা করা হয়। ভালভাবে বীজ শুকিয়ে শুকনো কাঠের গুড়া বা ছাইয়ের সাথে মিশিয়ে ছায়াতে ছড়িয়ে রাখা হয়। ৪/৫ দিন পর বীজ আলাদা করে বীজ তলায় বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে বীজ গজিয়ে চারা হয়।