পুষ্পা দ্য রাইজ- Pushpa the Rise

পুষ্পা দ্য রাইজ মুভি


পুষ্পা: দ্য রাইজ - পার্ট ১ ২০২১ সালের একটি ভারতীয় তেলুগু ভাষার ক্রাইম অ্যাকশন থ্রিলার চলচ্চিত্র, যা রচনা ও পরিচালনা করেছেন সুকুমার। এতে মূখ্য চরিত্রে অল্লু অর্জুনরশ্মিকা মন্দানাফাহাদ ফজিলপ্রকাশ রাজ ও জগপতি বাবু এবং প্বার্শ চরিত্রে হরিশ উথামান, বেন্নেলা কিশোর এবং অনসূয়া ভরদ্বাজ অভিনয় করেছেন। এতে সঙ্গীতে সুর দিয়েছেন দেবী শ্রী প্রসাদ এবং চলচ্চিত্রটি মুত্তামশেট্টি মিডিয়ার সাথে মৈত্রী মুভি মেকার্সের অধীনে নির্মিত হয়েছে। ছবিটি একই সাথে তেলুগুমালয়ালমতামিলকন্নড় এবং হিন্দি ভাষায় মুক্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল।

অল্লু অর্জুন অভিনীত ছবি পুষ্পা (Pushpa: The Rise) ব্যাপক ব্যবসা করছে। ছবিটি নিয়ে উচ্ছ্বসিত ভক্তরা। এবার দর্শকদের জন্য আরও একটি সুখবর। খুব তাড়াতাড়ি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেতে চলেছে ছবিটি। পরিচালক জানাচ্ছেন, ছবিটির হিন্দি ভার্সানটি এখনও পর্যন্ত ৩০০ কোটিরও বেশি ব্যবসা করেছে। এমনকী রণবীর সিং-এর ৮৩-কেও পিছনে ফেলে দিয়েছে ছবিটি। এবার ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও শীর্ষে আসার চেষ্টা করছে পুষ্পা। 

থিয়েটারে গত ১৭ ডিসেম্বর মুক্ত পেয়েছে ছবিটি। ক্রমেই বেড়ে চলেছে ছবির রোজগার। এখনও পর্যন্ত বক্স অফিসে ৩০০ কোটি পেরিয়ে গিয়েছে ছবিটি। এটি মালায়লম, হিন্দি সহ আরও বেশকিছু ভাষায় মুক্তি পেয়েছে। হিন্দিতে ছবির ব্যবসা খুব তাড়াতাড়িই ৭৫ কোটি পেরিয়ে যাবে। আর এবার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আসছে ছবিটি। 

পুষ্পা মুভির গল্প

পিতৃহীন পুষ্পা সাধারণ ট্রাকচালক থেকে ক্রমে হয়ে ওঠেন স্থানীয় অপরাধজগতের প্রভাবশালী নেতা। ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছেন ফাহাদ ফজিল, রশ্মিকা মন্দানা, প্রকাশ রাজসহ অনেকে।

তেমন প্রচারণা না থাকার পরও কেন এত জনপ্রিয় 'পুষ্পা: দ্য রাইজ'? ছবির শেষে কী চমক থাকছে দর্শকের জন্য?

গল্প: পুষ্পা- দ্যা রাইস,  গল্পের মূল বিষয় লাল চন্দন কাঠ পাচার এবং এই পাচারের সাথে যুক্ত চোরাকারবারিদের সিণ্ডিকেটের গল্প। পুষ্পারাজ এক সাধারণ শ্রমিক। যে পরে জড়িয়ে পড়ে চন্দন কাঠ পাচারে। সে বুদ্ধি করে বিভিন্ন ভাবে কাঠ পাচার শুরু করে। পুষ্পা ধীরেধীরে সিণ্ডিকেটের মধ্যে নিজের প্রভাব বাড়াতে শুরু করে এবং এই ব্যবসার মাথা মঙ্গলম শ্রীনুকে চ্যালেঞ্জ করে বসে। মূল গল্পের সাথে একটি সাইড স্টোরি রয়েছে যেখানে পুষ্পা তার জন্ম পরিচয় নিয়ে সন্দিহান। যে কারণে প্রেমিকার সাথে তার বিয়ে ভেঙে যায়। কিন্তু ভিলেনকে জখম করে সেই প্রেমিকাকেই সে উদ্ধার করে। গল্পে দুজন পুলিশ অফিসারের প্রসঙ্গ এসেছে। প্রথম জন ডিএসপি গোপিন্দাপ্পা। যে পুষ্পার উত্থানের প্রথমদিকে বাধাদানকারী অফিসার আর দ্বিতীয় আইপিএস অফিসার ভবর সিং। যে পুষ্পাকে থানায় অপমান করলে পুষ্পা তাকে উচিত শিক্ষা দেয়। পুষ্পার বিয়েতে সিনেমার প্রথম পর্বের ইতি দেখিয়েছেন পরিচালক। সিনেমার সব ভিলেনই জীবিত। পুষ্পার সাথে ছত্তিশ কা আঁকড়ার পুলিশ অফিসার ভবর সিং শেখাওয়াতও তৈরি পুষ্পার বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ার জন্য। এই সব হাজারো চমক অপেক্ষা করছে পুষ্পার পরবর্তী পর্বে। অনেকটা কেজিএফ চ্যপ্টার ওয়ানের মত পরিচালক এখানে শুধু গল্পের শুরু দেখিয়েছেন যা একাধিক পর্বে রোমাঞ্চ নিয়ে শেষ হবে।

সিনেমাটোগ্রাফি: অন্ধ্রপ্রদেশের একাধিক পাহাড়ি অঞ্চলে ছবির শুটিং হয়েছে। শেষাচলম পাহাড়ের ঘন জঙ্গলে একাধিক দৃশ্য শুট করা হয়েছে। সিনেমার গানের দৃশ্য ও লোকেশন বেশ মনকাড়া। পুরনো সময়ের সিকুয়েন্স ক্রিয়েট করার জন্য আটের দশকের লরি ও মারুতি ভ্যানের ব্যবহার দেখানো হয়েছে। পুষ্পা পুলিশের হাত থেকে ট্রাক চালিয়ে তা একটি কুয়োর মধ্যে ফেলে দেয় সেই দৃশ্যটি কার্যত বেশ রোমাঞ্চের সৃষ্টি করে। এছাড়া সিনেমার শেষের দিকে মঙ্গলম শ্রীনুর গুণ্ডাবাহিনীর সাথে যখন পুষ্পা লড়াই করছে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় সেই অ্যাকশন দৃশ্যটি কাবিলে তারিফ। এছাড়া নদীতে মোটরবাইক নিয়ে দৃশ্যটিও বেশ আধুনিক পদ্ধতিতে শুট করা হয়েছে। 

অভিনয়ে


সিনেমায় আল্লু এবং রেশমিকা মন্দানার অভিনয় দর্শক বেশ উপভোগ করেছে। সিনেমার নাচ-গান, অভিনয়, গল্পের জমাটি বুনন প্রশংসার দাবি রাখে। আইটেম গানে দক্ষিণী অভিনেত্রী সামান্থাকে বেশ মানিয়েছে। অন্যান্য দক্ষিণী ছবির প্লটের মত এই ছবির প্লটও একেবারে অভিনব। কেজিএফে যেমন স্বর্ণখনি অঞ্চলের কাহিনি প্রাধান্য পেয়েছিল পুষ্পায় তেমনি প্রাধান্য পেয়েছে লাল চন্দন কাঠ পাচারের কাহিনি। পরিচালক আল্লু অর্জুনের লুক ও মেকাপের দিকে বিশেষ দৃষ্টি যেমন দিয়েছেন তেমনি ভিলেন চরিত্রগুলির মেকাপও কাবিলে তারিফ। ফাহাদ ফাসিল অভিনয় করেছেন আইপিএস ভবর সিং চরিত্রে এবং মঙ্গলম শ্রীনুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুনীল ভার্মা এই দুটি চরিত্রের মেকাপ একেবারে ভিন্নরূপে তাদেরকে দর্শকের সামনে পেশ করেছে। এছাড়া ধনঞ্জয় হয়েছেন জলি রেড্ডি, অজয় ঘোষ হয়েছেন কোনডা রেড্ডি, সাতরু হয়েছেন ডিএসপি গোবিন্দাপ্পা এবং কল্পলতা হয়েছেন পুষ্পা রাজের মা। 

  • অল্লু অর্জুন - পুষ্পারাজ
  • রশ্মিকা মন্দানা - শ্রীভাল্লি
  • ফাহাদ ফজিল - ভানওয়ার সিং শেখাওয়াত আইপিএস
  • প্রকাশ রাজ
  • জগপতি বাবু
  • হরিশ উথামান
  • বেন্নেলা কিশোর
  • অনসূয়া ভরদ্বাজ
  • আনিশ কুরুভিল্লা
পুষ্পা মুভি প্রযোজনা 
শুরুতে সুকুমার এই প্রকল্পটি মহেশ বাবুকে দিয়ে এসএসএমবি ২৬ শিরোনামে ঘোষণা করেছিলেন। পরে দুজনের মধ্যে মতভেদের কারণে মহেশ অনিল রবিপুডির নির্দেশনায় তার পরবর্তী ছবি সারিলেরু নিকেভ্যারুতে স্বাক্ষর করে চলচ্চিত্রটি থেকে সরে আসেন। পরে সুকুমার স্ক্রিপ্টে ছোটখাটো পরিবর্তন করে অল্লু অর্জুনের সাথে প্রকল্পটি এগিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
চিত্রনাট্য ও ডায়লগ: "পুষ্পাকো কিসিনে ফ্লাওয়ার সমঝ লিয়া থা, উসকো সমঝায়া কে পুষ্পা ফ্লাওয়ার নেহি ফায়ার হে"  পুষ্পা সিনেমার এই ডায়লগ এখন সবার মুখে মুখে ফিরছে। সুকুমারের পুষ্পা রাজ চরিত্রে ধরা পড়েছে চন্দন দস্যু বীরাপ্পানের ছায়া। চিত্রনাট্যকার এই সিনেমার স্ক্রিপ্ট নিয়ে রীতিমতো গবেষণা চালিয়েছেন তা বেশ স্পষ্ট। আমাদের দেশে দু’ধরনের চন্দনকাঠ পাওয়া যায়। সাদা এবং লাল। সাদা চন্দনে সুন্দর গন্ধ থাকলেও লাল বা রক্ত চন্দনে কোনও গন্ধ নেই। কিন্তু এই কাঠের বিশেষ গুণের জন্যই এই চন্দনের চাহিদা বিশ্ব জুড়ে।আর এই বিপুল চাহিদার কারণেই এই কাঠ পাচার হয় সারা বিশ্বে। রক্তচন্দনকে তাই কেউ কেউ ‘লাল সোনা’ও বলে। এই গাছ অত্যন্ত বিরল এবং সোনার মতোই মূল্যবান। ‘পুষ্পা’ ছবিতে যে শেষাচলম জঙ্গলের কথা বলা হয়েছে রক্তচন্দন ওই শেষাচলম পাহাড়ের ঘন জঙ্গলেই পাওয়া যায়। তামিলনাড়ু লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের চার জেলা— নেল্লোর, কুর্নুল, চিতোর এবং কাডাপ্পা জেলাতে এই গাছ মেলে। পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়ায় এই গাছ খুব ভাল হয়। চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালক সুকুমার দক্ষিণের বিভিন্ন জঙ্গল ঘুরে লোকেশন নির্বাচন করেছেন। সুকুমারের বাস্তব প্রেক্ষাপটের এই গল্প এবং তার সঙ্গে একাধিক মানানসই ডায়ালগ সিনেমাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে গেছে। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

Ads3

Ads dawun