সরিষা
সরিষা (ইং“ Mustard) ব্রাসিকা (Brassica) বা ক্রুসিফেরি (Cruciferae) গোত্রের একটি দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। এটি একটি তৈলফসল। এর ডিম্বক বক্রমুখী ৷ সরিষার দানা মশলা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সরিষা শাক বাংলাদেশে জনপ্রিয়। এছাড়াও সরিষার দানা পানির সাথে মিশিয়ে ভিনেগারসহ বিভিন্ন তরল তৈরি করা হয়, দানা পিষে সরিষার তেল তৈরি করা হয় যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। সরিষার পাতা সরিষার শাক বা সর্ষে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। সরিষা ফুলে স্ব-পরাগায়ন ঘটে থাকে। স্বপরাগায়ন এর ফলে পরাগরেণুর অপচয় কম হয়, পরাগায়নের জন্য বাহক এর উপর নির্ভর করতে হয় না এবং পরাগায়ন নিশ্চিত হয়। এর ফলে নতুন যে উদ্ভিদ উৎপন্ন হয় তাতে বৈশিষ্ট্যের কোন পরিবর্তন আসে না এবং কোন একটি প্রজাতির চরিত্রগত বিশুদ্ধতা বজায় থাকে। তবে এতে জিনগত বৈচিত্র্য কম থাকে ।এই বিচার থেকে জন্ম নেওয়া নতুন গাছের অভিযোজন ক্ষমতা কমে যায় এবং অচিরেই প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে।
সরিষা বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর উৎপত্তিস্থল এশিয়া। ভারতীয় উপমহাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালীন রবি শস্য হিসেবে সরিষার চাষ করা হয়। সরিষার গাছ দৈর্ঘ্যে ১ মিটার মত হয়, তবেরাই সরিষা ২ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।
সরিষা চাষ প্রনালী
বপন পদ্ধতি: সরিষা বীজ সাধারণত ছিটিয়ে বপন করা হয়। লাইন করে বুনলে সুবিধা হয়।
বপনের সময়: অঞ্চল ভেদে মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য কার্তিক মাস পর্যন্ত।
নিড়ানী দেয়া: বপনের ১৫-২০ দিন পর একবার এবং ফুল আসার সময় দ্বিতীয়বার।
সেচ প্রয়োগ: বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে প্রথম সেচ এবং ৫০-৫৫ দিসের মধ্যে দ্বিতীয় সেচ।
সারের পরিমাণ: জাত, মাটি ও মাটিতে রসের তারতম্য অনুসারে বিভিন্ন সার দিতে হয়।
সরিষার গুনাগুন ও ব্যবহার
- দাঁতের মাড়ি ক্ষয় দূর করতে সরিষা মাজন হিসাবে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
- দেহের ঝিনঝিনি দূর করতে
ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ হলে খাঁটি সরিষার তেল খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশে সরিষার চাষ
সরিষা একটি তৈলফসল। সরিষা বাংলাদেশের প্রধান ভোজ্য তেল। প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ হেক্টর জমিতে (২০২০) এর সরিষা আবাদ করা হয়। বিভিন্ন জাতের সরিষার বীজে প্রায় ৪০-৪৪% তেল থাকে। বাংলাদেশে সরিষার তেলের উৎপাদনের বাৎসরিক পরিমাণ প্রায় আড়াই লক্ষ টন (২০২০)। সরিষার খৈলে প্রায় ৪০% আমিষ থাকে। বাংলাদেশে ৩ প্রকার সরিষার চাষ করা হয় যথা মাঘী সরিষা, রাই সরিষা ও ধলি সরিষা।। বাংলাদেশে এর বেশ কিছু উচ্চ ফলনশীল প্রজাতি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
বারি সরিষা-৯
এই জাতে গাছের উচ্চতা ৮০-৯৫ সেমি এবং প্রতি গাছে ৪-৬টি শাখা থাকে। পাতা হালকা সবুজ রঙের এবং মসৃণ। পাতার বোঁটা কান্ডকে সম্পূর্ণ ঘিরে রাখে। প্রস্ফুটিত ফুল কুঁড়ির উপরে থাকে। ফুলের রং হলুদ। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৮০-১০০টি। ফল ২ কক্ষ বিশিষ্ট। প্রতি বীজে ফলের সংখ্যা ১৫-২০টি। বীজের রং পিঙ্গল। এক হাজার বীজের ওজন ২.৫-৩.০ গ্রাম। বীজে তেলে পরিমাণ ৪৩-৪৪ ভাগ। ফসল পাকতে ৮০-৮৫ দিন সময় লাগে। পরিমিত সার ও সেচ প্রয়োগে হেক্টর প্রতি ১.২৫-১.৪৫ মে.টন ফলন পাওয়া যায়।
বারি সরিষা-১৪
এই জাতে গাছের উচ্চতা ৭৫-৮৫ সেমি। পাতা হালকা সবুজ রঙের এবং মসৃণ। ফুলের রং হলুদ। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৮০-১০০টি। ফল ৪ কক্ষ বিশিষ্ট মনে হলেও ২ কক্ষ বিশিষ্ট। প্রতি বীজে ফলের সংখ্যা ২২-২৬টি। বীজের রং হলুদ। এক হাজার বীজের ওজন ৩.৫-৩.৮ গ্রাম। ফসল পাকতে ৭৫-৮০ দিন সময় লাগে। পরিমিত সার ও সেচ প্রয়োগে হেক্টর প্রতি ১.৪-১.৬ মে.টন ফলন পাওয়া যায়।
বারি সরিষা-১৫
এই জাতে গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি। পাতা হালকা সবুজ রঙের এবং মসৃণ। প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৭০-৮০টি। ফল ২ কক্ষ বিশিষ্ট। প্রতি বীজে ফলের সংখ্যা ২০-২২টি। ফল বারি সরিষা-১৪ এর তুলনায় সরু ও লম্বা। বীজের রং হলুদ। এক হাজার বীজের ওজন ৩.২৫-৩.৫০ গ্রাম। ফসল পাকতে ৮০-৮৫ দিন সময় লাগে। পরিমিত সার ও সেচ প্রয়োগে হেক্টর প্রতি ১.৫৫-১.৬৫ মে.টন ফলন পাওয়া যায়।
বারি সরিষা-১৭
এই জাতে গাছের উচ্চতা ৯৫-৯৭ সেমি। পাতা হালকা সবুজ রঙের এবং মসৃণ, ফুলের রং হলুদ, প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৬০-৬৫টি। প্রতি বীজে ফলের সংখ্যা ২৮-৩০টি। বীজের রং হলুদ। এক হাজার বীজের ওজন ৩.০-৩.৪ গ্রাম। ফসল পাকতে ৮২-৮৬ দিন সময় লাগে। ফলন হেক্টর প্রতি ১.৭-১.৮ মে.টন।
বিনা সরিষা-৪
এই জাতে গাছের উচ্চতা ৯০-৯৫ সেমি। প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ৩-৫ টি। ফুলের রং হলুদ, বীজের রং লালচে কালো। ফসল পাকতে ৮০-৮৫ দিন সময় লাগে। এ জাতে এক হাজার বীজের ওজন ৩.৬-৩.৮ গ্রাম। ফলন হেক্টর প্রতি ১.৮০ মে.টন। এ জাতের সরিষা মধ্য অগ্রহায়ণ পর্যন্ত বপন করা করা যায়।
বিনা সরিষা-৯
এই জাতে গাছের উচ্চতা ৮৫-৯০ সেমি। প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ৩-৪টি, ফুলের রং হলুদ, বীজের রং লালচে কালো। ফসল পাকতে ৮০-৮৪ দিন সময় লাগে।এক হাজার বীজের ওজন ২.৯-৩.৫ গ্রাম। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১.৭ মে.টন। এই জাত অল্টারনারিয়া ব্লাইট ও বৃষ্টিজনিত সাময়িক জলাবদ্ধতা সহনশীল।
বিনা সরিষা-১০
এই জাতে গাছের উচ্চতা ৯৫-১০৫ সেমি এবং প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ৩-৫টি, ফুলের রং হলুদ, বীজের রং লালচে। উচ্চফলনশীল এক হাজার বীজের ওজন ২.৮-২.৯ গ্রাম। ফসল পাকতে ৭৮-৮২ দিন সময় লাগে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১.৫ মে.টন। এই জাতে বীজে তেলের পরিমাণ ৪২%।
সরিষা কোন ধরনের উদ্ভিদ
সরিষা কোন ধরনের উদ্ভিদ? সরিষা গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ।
সরিষা গাছের বৈশিষ্ট্য
এই জাতে গাছের উচ্চতা ৯৫-১০৫ সেমি এবং প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ৩-৫টি, ফুলের রং হলুদ, বীজের রং লালচে। উচ্চফলনশীল এক হাজার বীজের ওজন ২.৮-২.৯ গ্রাম। ফসল পাকতে ৭৮-৮২ দিন সময় লাগে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ১.৫ মে.
সরিষা উৎপাদন
সরিষা এর বীজ উৎপাদন এবং সংরক্ষণের তথ্য বীজ উৎপাদন : অন্য জাত ও কপি জাতীয় ফসল থেকে ৫ মিটার নিরিপদ দূরত্ব ব্জায় রাখুন। ... শুটিসহ গাছ উপড়ে বা গাছ কেটে ফসল মাড়াই করার জাইগায় এনে লেপা/পাকা খোলা বা ত্রিপল/পলিসিটের উপর কয়েক দিন গাদা করে রাখুন।
সরিষার প্রকারভেদ
বাংলাদেশে ৩ প্রকার সরিষার চাষ করা হয় যথা মাঘী সরিষা, রাই সরিষা ও ধলি সরিষা।।
কোন সরিষার তেল ভালো
সানফ্লাওয়ার তেলের উপকারিতা
তাই বলা হয় সূর্যমুখীর তেল হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো। এই তেলের পুষ্টিগুণ প্রায় সরিষার তেলের কাছাকাছি। পুষ্টিবিদরা প্রতিদিনের রান্নার কাজে এই তেল ব্যবহারের উপদেশ দেয়।
সরিষার তেলের উপকারিতা
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং ছত্রাক প্রতিরোধক উপাদান থাকায় র্যাশ ও রোগ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। দীর্ঘ কালো চুলের জন্য সরিষার তেল খুব উপকারী। গ্লুকোসিনোলেট থাকায় ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ত্বকের ব্রণ হোক বা ট্যান পড়া, সব ক্ষেত্রেই সরিষার তেল কাজে দেবে।
চুলে সরিষা তেলের উপকারিতা
এ ছাড়া চুল সুন্দর, বড়, মজবুত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে সরিষার তেল অত্যন্ত উপকারী। চুল বড় হতে সাহায্য করে সরিষার তেলে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা চুল বড় হতে সাহায্য করে। সরিষার তেলে অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান থাকায় তা চুলের খুশকি ও চুলকানি দূর করে। ফাঙ্গাশে চুলের গোড়া বুজে গিয়ে চুল পাতলা হয়ে যায়।
সরিষা তেল গায়ে মাখার উপকারিতা
সরিষার তেলে রয়েছে ভিটামিন এ, ই এবং বি কমপ্লেক্স। ফলে এটি রিংকল কমাতে সাহায্য করে। সানস্ক্রিনে খুব ঘাম হলে বা কোনভাবে সানস্ক্রিন বাড়িতে না থাকলে অল্প সরিষার তেল হাতের তালুতে ঘষে মুখে লাগিয়ে নিলে তা সূর্যের ক্ষতিকারক আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করবে। তবে বেশি তেলে ধুলোবালি ধরে রাখে ত্বক।
সরিষা বাংলাদেশের প্রধান ভোজ্য তেল। প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ হেক্টর জমিতে (২০২০) এর সরিষা আবাদ করা হয়। বিভিন্ন জাতের সরিষার বীজে প্রায় ৪০-৪৪% তেল থাকে। ... বাংলাদেশে ৩ প্রকার সরিষার চাষ করা হয় যথা মাঘী সরিষা, রাই সরিষা ও ধলি সরিষা।।