জবা ফুল
(ইংরেজি: Chinese hibiscus, বা China rose) হল মালভেসি গোত্রের অন্তর্গত একটি চিরসবুজ পুষ্পধারী গুল্ম, যার উৎপত্তি পূর্ব এশিয়াতে। এটি চীনা গোলাপ নামেও পরিচিত।
জবা ফুল চাষ
বাগানের গাছ হিসেবে জবাকে গ্রীষ্মমণ্ডল এবং উপগ্রীষ্মমণ্ডল অঞ্চলে সর্বত্র ব্যবহার করা হয়। যেহেতু জবা ১০°সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না, তাই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে জবা গাছকে গ্রীনহাউসে রাখা হয়। জবা গাছের বিভিন্ন রকমের সংকর প্রজাতি আছে, যাদের ফুলের রঙ সাদা, হলুদ,কমলা, ইত্যাদি হতে পারে।
জবা ফুল চাষের পদ্ধতি
জবা ফুলের গুনাগুন
- চোখ ওঠা রোগ দূর করতে এর পাতার প্রলেপ দিলে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
- সর্দি ও কাশিতে জবা ফুল বেটে রস করে জলে মিশিয়ে খেলে রুগী সুস্থ হয়ে যাবে।
- চুলের বৃদ্ধির জন্য পাতার রস তেলের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে।
- জবা ফুলের রস থেকে জবাকুসুম তেল তৈরি করা হয়। চক্রদত্ত মতে- প্রায় ৮সের জবাফুলের রস ও দুধ, ষষ্ঠিমধু কঙ্ক ৮ তোলা, একসের সরিষা তেল একত্রে মিশ্রিত করে, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জ্বাল দিয়ে জবাকুসুম তেল তৈরি করা হয়। তবে এই সাধারণবিধি অনুসারে অভিজ্ঞ তেল প্রস্তুতকারকই যথার্থ জবাকুসুম তেল তৈরি করতে পারেন। এই তেল চুলে ব্যবহার করলে, চুল পড়া বন্ধ হয় এবং চুল কালো হয়।
- কবিরাজি বিধি অনুসারে জবাফুলের রস সেবনে, স্ত্রীলোকের ঋতুস্রাব দোষ নিরাময় হয়। এর ফুল ভেজে খেলে অনিয়মিত এবং অল্প ঋতুস্রাবজনীত অসুবিধা দূর হয়।
- এর কুঁড়ি পুরুষের ধাতুদৌর্বল্য দূর করে।
- ফুলের ক্বাথ সরবতের সাথে পান করলে জ্বর ও কাসির উপসম হয়।
জবা
সংস্কৃত : জপা, জবাপুষ্পম।
সমার্থক বাংলা নাম : জবা, ঝুমকা জবা, জবা কুসুম।
ইংরেজি : Chinese hibiscus, China rose এবং shoe flower।
বৈজ্ঞানিক নাম : Hibiscus rosa-sinensis Linn
Malvaceae গোত্রের গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদের আদি নিবাস চীন। ভারতবর্ষ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার একটি জনপ্রিয় ফুল। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এই ফুল কালিপূজায় ব্যবহার করে। মালয় উপদ্বীপে এই ফুলকে বলা হয় বুঙ্গা রায়য়া (Bunga Raya)। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে মালোয়েশিয়ায় জবা'কে জাতীয় ফুল হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
এই উদ্ভিদ প্রায় ৪ থেকে ৬ মিটার লম্বা হয়। পাতার দৈর্ঘ্য ১০ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ৬ সেন্টিমিটার। পাতার প্রান্তভাগ খাঁজকাটা, গা মসৃণ। পাতাগুলো ডালে একান্তরভাবে সজ্জিত থাকে। পাতার গোড়ায় উপপত্র থাকে।
এর ফুলের লম্বা বৃন্ত থাকে। বৃ্ন্তের শেষ মাথায় ফুলের পাঁচটি উপবৃতি আছে। উপবৃতির রঙ সবুজ। উপবৃতির উপরে আছে ৫টি বৃতি। এই বৃতিগুলো নলকারে থাকে। এরপরে রয়েছে মূল ফূল। ফুলের পাপড়ির সংখ্যা ৫টি। পাপড়িগুলোর উপরের দিক বিযুক্ত কিন্তু এর তলদেশ সংযুক্ত থাকে। ফুলের মধ্যভাগ থেকে একটি লম্বা পুষ্পদণ্ড বঙ্কিমাকারে থাকে। এই দণ্ডের গায়ে অসংখ্য পুংকেশর থাকে। পুষ্পদণ্ডের শীর্ষাভাগে থাকে স্ত্রীকেশর। স্ত্রীকেশরের মাথায় পাঁচটি গর্ভপত্র রয়েছে। এই গাছের গোলাকার বীজকোষে অনেক বীজ থাকে।
এই উদ্ভিদের নানা বর্ণের ফুল দেখা যায়। ভারতবর্ষে লাল রঙের জবাকে রক্তজবা বলা হয়। এছাড়া রয়েছে শ্বেত জবা, হলুদ জবা, গোলাপি জবা। নিচে কয়েক প্রকার রঙের জবার নমুনা দেখানো হলো।
ডায়াবেটিস নিরাময়ে জবা
খুব সাধারণ একটি ফুল জবা। যার দেখা পাওয়া খুব সহজ। জবা বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। লাল, গোলাপি, সাদা, হলুদ, কমলা ইত্যাদি রঙের জবা আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাল জবা আয়ুর্বেদ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নানা রোগের প্রতিকারক হিসেবে এবং চুলের যতেœও জবা ফুল চমৎকার কাজ করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে জবা ফুলের কিছু ব্যবহার সম্পর্কে-ফেসপ্যাক হিসেবে : লাল জবার পাপড়ি শুকিয়ে গুঁড়া করে রাখুন। প্রতিদিন পানি বা দুধ বা ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে মুখ পরিষ্কার হয়, মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং বলিরেখার আবির্ভাব রোধ করে।
শুষ্ক ত্বকের নিরাময়ে : নারিকেল তেল বা তিলের তেলের সঙ্গে জবার পাপড়ি দিয়ে তাপ দিন। তারপর এটি ঠা-া হলে শুষ্ক ত্বকে লাগান। এটি শুষ্ক ত্বককে নিরাময় করবে এবং যে কোনো ধরনের ফাটাও ভালো করবে।
টাক পড়া রোগ : চুল স্বাভাবিক আছে অথচ ফাঙ্গাসে কিছু জায়গার চুল উঠে টাক হয়ে গেছে, এ অবস্থায় জবাফুল বেটে ওখানে লাগালে কিছু দিনের মধ্যে চুল উঠে যাবে। এক বা দুইটা ফুল বেটে ৭ বা ৮ দিন যে কোনো সময় লাগাতে হবে এবং দুই বা এক ঘণ্টা রাখতে হবে অথবা যতক্ষণ সম্ভব রাখতে হবে।
চোখ ওঠা : চোখের কোণে ক্ষত হয়ে পুঁজ পড়ছে। সে ক্ষেত্রে জবা ফুল বেটে চোখের ভেতরটা বাদ দিয়ে চোখের উপর ও নিচের পাতায় গোল করে লাগিয়ে দিলে উপকার পাওয়া যায়। দিনের যে কোনো সময় এক বা দুইটা ফুল বেটে ৭ বা ৮ দিন লাগাতে হবে এবং এক ঘণ্টা রাখতে হবে।
হাতের তালুতে চামড়া ওঠা : হাতের তালুতে চামড়া উঠে খসখসে হয়ে গেলে জবা ফুল তালুতে মাখলে খুব উপকার পাওয়া যায়। দিনে দুই-তিন বার এক বা দুইটা ফুল হাতের মধ্যেই ডলে ডলে লাগাতে হবে। লাগিয়ে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করা যাবে। যতক্ষণ সম্ভব রাখতে হবে।
ডায়াবেটিস নিরাময়ে : বায়ো কেমিক্যাল ও বায়ো ফিজিক্যাল রিসার্চ কমিউনিকেশনসে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, জবা ফুল থেকে তৈরি উপাদান ইনস্যুলিনের সংবেদনশীলতা পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। জবা ফুলে থাকে ফেরুলিক এসিড, যা এক ধরনের পলিফেনল এবং এটি ডায়াবেটিসের জন্য চিকিৎসা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও মূত্রনালির সংক্রমণ প্রতিরোধ, জ্বর নিয়ন্ত্রণ ও ঠান্ডা বা ফ্লু নিরাময়, ব্যথা কমাতে, চুল পড়া কমায়, শিশুদের শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহৃত হয়। খুশকির বিরুদ্ধে জবা ভালো কাজ করে।
জবা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম
Hibiscus rosa-sinensis