🌿স্টেভিয়া কি?
স্টেভিয়া উপকারী এক ভেষজ উদ্ভিদ যা বিশ্বে সুপরিচিত। এটি গুল্ম জাতীয় বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ। স্টেভিয়ার পাতা চিনির চেয়ে কমপক্ষে ৪০গুণ বেশি মিষ্টি এবং এর পাতায় বিদ্যমান স্টেভিয়াসাইড চিনির চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি।
🌿কেন স্টেভিয়া?
চিনির বিকল্প হিসেবে জিরো ক্যালরি, জিরো কার্বোহাইড্রেট ও রক্তে চিনির পরিমাণ বা শর্করার মাত্রা বাড়ায় না।
🌿 স্টেভিয়ার উপকারিতাঃ-
🔸এতে কোন ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেট নেই।
🔸উপাদানটিতে অ্যাসপার্টেম, সেকারিন, সুক্রলস বা কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় কোনো জিনিস নেই।
🔸ক্ষতিকর চিনির বিকল্প হিসেবে ডায়াবেটিক রোগীসহ সকলে খেতে পারবেন।
🔸এতে রয়েছে বিভিন্ন খনিজ ও ভিটামিন ;
যেমনঃ-ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, বিটা - ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম,আয়রন, ফাইবার, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১, রিবোফ্লাবিন ইত্যাদি।
🌿স্টেভিয়া ব্যবহারের নিয়মঃ-
🔸স্টেভিয়ার পাতার পাউডার শরবত, পায়েশ, মিষ্টি দই, কেক, পুডিং, আইসক্রিম ইত্যাদি তৈরী করে খাওয়া যায়।
🔸স্টেভিয়ার তাজা পাতা বা শুকনো পাতা বা পাতার গুড়া রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই মিষ্টি পানি খাওয়া যায়।
🔸সরাসরি স্টেভিয়ার তাজা পাতা খাওয়া যায়।
🔸সরাসরি স্টেভিয়ার গুঁড়া খাওয়া যায়।
🔸স্টেভিয়ার তাজা পাতা ছেচেঁও খাওয়া যাবে ; যেমন চা/কফি বা অন্য যে কোন খাবারের সাথে।
🔸পাতা কুচি কুচি করে কেটে সালাদে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
🔸পানের সাথে জর্দ্দার পরিবর্তে মিষ্টি পান হিসেবে খাওয়া যাবে।
🔸চা বা কফির সাথে ব্যবহারের জন্য চা চামচের চার ভাগের একভাগ স্টেভিয়ার পাউডার চায়ের কাপে ঢেলে নিয়ে চামচ দিয়ে নেড়ে প্রিজ দিয়ে চা কাপটা ঢেকে রাখুন ২/৩ মিনিট। পরে আবার চা চামচ দিয়ে নেড়ে পান করুন। মিষ্টি কম বেশি করতে পাউডার কম বা বেশি করে ব্যবহার করুন।
🔸অল্প পানিতে শুকনো পাতা বা পাতার গুড়া ভিজিয়ে ১০ মিনিট পর গরম পানি মিশিয়ে হারবাল টি হিসেবে পান করতে পারবেন।
চিনি গাছ স্টেভিয়া (Stevia) গাছটির সহজ বাংলা নাম। এই গাছ প্যারাগুয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি লতা গুল্ম জাতীয় গাছ। এর পাতা খুবই মিষ্টি যা চিনির চেয়ে ৫০ গুন বেশি মিষ্টি বলে দাবি করা হয়। এর শুকনো পাতা গুঁড়া করে ব্যবহার হয়। এর নির্যাস চিনি থেকে ২০০-৩০০ গুন বেশি মিষ্টি। এটি ডায়াবেটিস এর কোন ক্ষতি করেনা বরং কমাতে সাহায্য করে। জাপান সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী তারা তাদের মোট চিনি চাহিদার ৪০% এই স্টেভিয়া বা চিনি গাছ থেকে সংগ্রহ করে। বাংলাদেশে ব্রাক এটি উৎপাদন ও বিক্রয় করছে।
স্টেভিয়ার উপকারিতা
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দমন করে, খাদ্য হজমে সহায়তা করে, স্টেভিয়াতে কোনো ক্যালরি না থাকায় স্থূলতা রোধ করে, শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে, মিষ্টি জাতীয় খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। খাবারে গুণাগুণ বৃদ্ধি করে ও সুগন্ধ আনয়ন করে, শরীরের সুস্থতা ও সতেজতাবোধ সৃষ্টি করে।
স্টেভিয়া কোথায় পাওয়ায়
ইতিহাস: স্টেভিয়ার আদি নিবাস প্যারাগুয়ে। ১৯৬৪ সালে প্যারাগুয়েতে প্রথম বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু। জাপানে শুরু হয় ১৯৬৮ সালে। তখন থেকে বিভিন্ন দেশে বিশেষত ব্রাজিল, কলম্বিয়া, পেরু, চীন, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা, ইসরাইল, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, মালেশিয়াসহ প্রভৃতি দেশে এটি ফসল হিসেবে চাষাবাদ শুরু হয়।
স্টেভিয়া চাষ পদ্ধতি
টবে চাষ : বাসাবাড়িতে টবে বা পটে সহজেই স্টেভিয়া চাষ করা যায়। তবে গাছের টব রৌদ্রযুক্ত বারান্দায় বা ছাদে রাখতে হবে। টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদিত স্টেভিয়ার ছোট চারা নিষ্কাশনযুক্ত দো-আঁশ মাটিতে অথবা দো-আঁশ ও জৈব সার মিশ্রিত ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি মাটির টবে সারাবছর রোপণ করা যায়।
স্টেভিয়া বীজ
স্টেভিয়া মিষ্টি গুল্ম জাতীয় ভেষজ গাছ। এটি কষ্টসহিষ্ণু বহু বর্ষজীবী এবং ৬০-৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাতা বর্ষাকৃতি, ফুল সাদা এবং বীজ ক্ষুদ্রাকৃতি। ... স্টেভিয়ার পাতা চিনি অপেক্ষা ৩০-৪০ গুণ এবং পাতার স্টেভিয়াসাইড চিনি অপেক্ষা ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি।
স্টেভিয়া পাউডার
স্টেভিয়া গাছের পাতার গুড়াই হলো স্টেভিয়ার পাউডার। এটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান। বিস্ময়কর বিষয় যে, এতে কোন ক্যালরি নেই, নেই কোন কার্বোহাইড্রেট। প্রচন্ড মিষ্টতা সত্ত্বেও মানবদেহে ব্লাড সুগারের পরিমান বিন্দুমাত্র বাড়ায় না।
স্টেভিয়া কি কাজ করে
খাবারে গুণাগুণ বৃদ্ধি করে ও সুগন্ধ আনয়ন করে, শরীরের সুস্থতা ও সতেজতাবোধ সৃষ্টি করে। এটি ব্যাকটেরিয়া সাইডাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, স্কিন কেয়ার হিসেবে কাজ করে বিধায় ত্বকের কোমলতা এবং লাবণ্য বৃদ্ধি করে, স্বাদ বৃদ্ধিকারক হিসাবে কাজ করে।
স্টেভিয়ার গুনাগুন
স্টেভিয়া এক জাদুকরি ভেষজ উদ্ভিদ। সম্প্রতিকালে ডায়াবেটিক রোগীদের কাছে এই গাছটি নিয়ে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। আগ্রহ সৃষ্টির মূলে রয়েছে এর মিষ্টতা। এ গাছের পাতার মিষ্টি উপাদান ঝঃবারড়ংরফব এ চিনির চেয়ে ২৫০-৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি স্টেভিয়া গাছের পাতার শুকনো সবুজ পাউডার যা চিনির চেয়ে ২৫-৩০ গুণ বেশি মিষ্টি। স্টেভিওসাইড গ্লাইকোসাইডে ক্যালরি না থাকার কারণে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে এটি কার্যকরী।
স্টেভিয়াতে থাকা প্রচুর ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট। এ গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Stevia rebaundiana এবং এটি Astevceae পরিবারভুক্ত বহুবর্ষজীবী। গাছটি ৬০-৭০ মিটার লম্বা হয়। গাছটির আদি নিবাস প্যারাগুয়ে ও দক্ষিণ আমেরিকা। স্টেভিয়া নামটির নামকরণ করেন স্প্যানিশ বোটানিস্ট ড. পিটার জেমস ইস্টিভ। প্যারাগুয়ের রসায়নবিদ ড. রিবাউডি সর্বপ্রথম এ গাছের পাতা ও কাণ্ড থেকে মিষ্টতার যৌগ Stevioside পৃথক করেন। প্যারাগুয়ের স্থানীয় জনগণ এ গাছটিকে কা হি হি অর্থাৎ মধু গাছ হিসেবে ডাকে।
৭০ দশকের পর থেকে স্টেভিয়া প্রাকৃতিক ক্যালরিবিহীন মিষ্টি এবং ভেষজ গুণাগুণসম্পন্ন উদ্ভিদ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। এরপর থেকে সারা বিশ্বে বিশেষত আমেরিকা, কানাডা, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, কোরিয়া, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড এটি ফসল হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়েছে। সম্প্রতিকালে আমাদের দেশেও এ গাছ ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে এবং এ গাছের পাউডার বাজারজাত করা হচ্ছে।