জাফরান কি?
জফরান (গাছ) ফুল থেকে সংগৃহীত এক প্রকারের মশলা যা সাধারণভাবে "জাফরান ক্রোকাস" নামে পরিচিত। জাফরন ফুলের প্রাণবন্ত গাঢ় লাল রঙের এবং শৈলীর গর্ভমুণ্ড, যাকে জাফরন আঁশ বলা হয়। জাফরানের বেশ সুখ্যাতি আছে ভারতের কাশমিরের, ফাফরান সংগ্রহ এবং শুকানোর মাধ্যমে জাফরন মশলা তৈরি করা হয়। যা প্রধানত খাবারের স্বাদ এবং রঙের জন্য ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ওজন এর দিকে দিয়ে জাফরন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মসলা।
জাফরান উৎপত্তিস্থল কোথায়?
যদিও জাফরনের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে কিছু দ্বিমত আছে ,তারপরেও এটা ধারণা করা হয় যে, জাফরন ইরান থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। তারপরেও,গ্রীস এবং মেসোপটেমিয়া অঞ্চলকে জাফরনের উৎপত্তির সম্ভাব্য অঞ্চল হিসাবে ধারণা করা হয়। সি স্যাটিভাস সম্ভবত ক্রোকাস কার্টরাইটনাস এর একটি ট্রিপলয়েড ফর্ম। জাফরন ক্রোকাস ধীরে ধীরে ইউরেশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পরেছিল এবং পরে উত্তর আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা এর ব্যাপক খ্যাতি সাধন হয় এবং জাফরানের সুনাম পুরো বিশ্ব জুরে ছরিয়ে পরে।
৭ম শতাব্দীতে অ্যাসিরিয়ান রাজা আশুরবানিপাল দ্বারা সঙ্কলন করা উদ্ভিদসংক্রান্ত গ্রন্থে জাফরনের ইতিহাসের নথীভুক্তি পাওয়া যায় এবং চার হাজার বছরের বেশি ধরে এর ব্যবসা ও ব্যবহার চালু রয়েছে । বর্তমানে বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ৯০% অংশ ইরানে উৎপাদিত হচ্ছে।
জাফরানের উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা
জাফরান গাছ কোথায় পাওয়া যাই?
বাংলাদেশ মুলত জাফরান চাষ হয় না, তবে জাফরানের মসলা ও গুড়ো পাওয়া যাই। এক অজানা কারণে জাফরান ফল তৈরি করতে পারে না। যার ফলে এটা বংশ বিস্তারের জন্য মানুষের সাহয্য প্রয়োজন হয়। ক্রোমগুলি মাত্র এক বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং এর মধ্যেই এই ক্রোমগুলিকে মাটিতে রোপন করতে হয়।
এটি ওজনের মধ্যে বিশ্বের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান মসলার একটি। এদের বেশির ভাগ ইরানে জন্মায়। এটি গ্রিসে প্রথম চাষ করা হয়েছিল। এদের অন্যান্য স্থানীয় নামের মধ্যে আছে saffron Za'afaran, Zaafaran Kesar, Zafran.
জাফরান চাষ পদ্ধতি
চাষকৃত জাফরন ক্রোকাস, ক্রোকাস সাটিভাস, হচ্ছে শরৎকালীয়- বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক উদ্ভিদ যা বন্য পরিবেশে জন্মায় না। এটি সম্ভবত পূর্বাঞ্চলীয় ভূমধ্যসাগরীয় শরৎকালীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ ক্রোকাস কার্টওয়াইটিয়ানাস থেকে উৎপত্তি হয়েছে যা "বন্য জাফরন" নামেও পরিচিত এবং যা ক্রিট বা মধ্য এশিয়ায় অঞ্চলসমুহ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। সি থোমাসি এবং সি পলসসি প্রজাতিসমুহ হচ্ছে জাফরন এর অন্যান্য সম্ভাব্য উৎস। জিনগত একই ধরনের হুবুহু নকল হিসাবে, এটি ধীরে ধীরে ইউরেশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পরে।
জাফরান ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আকর্ষণীয় এর সুগন্ধ। এই উদ্ভিদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর কোনো বীজ হয় না। বিস্ময়ের ব্যাপার যে, এর ফুল হয় অথচ বীজ হয় না । আর বীজ না হওয়ার কারণ হচ্ছে এই উদ্ভিদের দেহে কোন মিয়োসিস কোষ বিভাজন হয় না। আমরা জানি যে, পুং রেণু আর স্ত্রী রেণু তৈরি হয় মিয়োসিস কোষ বিভাজন দ্বারা। যেহেতু জাফরান উদ্ভিদের দেহে কখনই মিয়োসিস বিভাজন হয় না, সেহেতু পুং রেণু ও স্ত্রী রেণুও তৈরি হয় না। পুং রেণু ও স্ত্রী রেণুর মিলনেই বীজ তৈরি হয়। এই উদ্ভিদে পুং রেণু ও স্ত্রী রেণু সৃষ্টি হয় না বিধায় বীজও হয় না। আর এই জন্ম প্রক্রিয়ার জন্যও এরা এত মূল্যবান।
তৈরী বীজ তলার জন্য প্রায় ১৫০টা জাফরানের মোথার প্রয়োজন হয়। বর্ষা শেষ হওয়ার পূর্বক্ষণে জুলাই- আগষ্ট মাসে এ ফসলের মোথা বা বালব (Bulb) রোপন করা হয়। শুরুতে বেশি গভীর ভাবে জমি চাষ করে তৈরী কালে প্রতি শতক জমিতে পঁচা গোবর/আবর্জনা পঁচা সার ৩০০ কেজি, টিএসপি ৩ কেজি এবং এমওপি ৪ কেজি প্রয়োগ করে ভালোভাবে মাটির সাথে সমস্ত সার মিশিয়ে হালকা সেচ দিয়ে রেখে দিয়ে দু’সপ্তাহ পর জাফরান বালব রোপন উপযোগী হবে। বসতবাড়ি এলাকায় এ ফসল চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
জাফরান চাষ এবং সংগ্রহ পদ্ধতি অত্যন্ত নিখুঁত। তাই এই কাজের জন্য দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন। ভারমন্ট ইউনিভার্সিটির পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট আরাশ গালেহগোলাব্বেহবাহানি বলেন, “জাফরান হচ্ছে ডিহাইড্রেটেড বা শুকনো গর্ভমুণ্ড। এটি ফুলের স্ত্রী অংশ। এই গর্ভমুণ্ডকেই আলাদা করে শুকিয়ে নিতে হয়। আর এসব পদ্ধতি সম্পন্ন করার জন্য শ্রমিকদের হাতের প্রয়োজন হয়।”
পাথার কুচি পাতার উপকারিতা ও গুনাগুন
বাংলাদেশে জাফরানের দাম কত?
ওজনের দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামি মসলা জাফরান। ১ কেজি জাফরানের গড় দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা। জাফরান গাছের ফুল থেকেই জাফরান আঁশ সংগ্রহ করা হয়। আর ৪৫০ গ্রাম জাফরান তৈরির জন্য প্রায় ৭৫ হাজার ফুল প্রয়োজন। যে-কোনো মসলা সংগ্রহের পদ্ধতি থেকে জাফরান সংগ্রহ পদ্ধতি অনেকটা আলাদা। অল্প সময়ের মধ্যে দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে এই মসলা সংগ্রহ করতে হয়। মূলত জাফরানের চাষ এবং সংগ্রহ পদ্ধতির কারণেই জাফরান অনেক বেশি দামি।
জাফরানের মূল্য বেশি হলেও এটি কি আসল না-কি নকল তা নিয়ে রয়েছে অনেক সংশয়। তবে আসল জাফরান চেনারও বেশকিছু উপায় আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জাফরান আসল কি না সেটা জানা যায় এর গন্ধ থেকে। যদি জাফরানের ঘ্রাণ মিষ্টি আর স্বাদ তেতো হয়, তবে সেটি আসল জাফরান। এছাড়াও কয়েকটি জাফরান পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেয়াল করুন সেগুলো রং ছেড়ে দিচ্ছে কি না। আসল জাফরান রং ছেড়ে দিলেও সেটি লালচেই থাকবে, কিন্তু নকল জাফরান সাদা হয়ে যাবে।
জাফরানের চাহিদা
জাফরান ফুলের প্রাণবন্ত গাঢ় লাল রঙের এবং শৈলীর গর্ভমুণ্ড, যাকে জাফরান আঁশ বলা হয়। এগুলোকে ইংরেজিতে বলে স্টিগমা। জাফরান আঁশ সংগ্রহ এবং শুকানোর মাধ্যমে জাফরান মশলা তৈরি করা হয় যা প্রধানত খাবারের স্বাদ এবং রঙের জন্য ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে জাফরান মূলত ব্যবহার হয় জরদা নামের মিষ্টান্ন ও পায়েস তৈরিতে। বিরিয়ানির সুন্দর রং আনার জন্যও জাফরান ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও আরও অনেক খাবার তৈরির কাজেও এই জাফরানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
জাফরান চাষ ভারতে কোথায় হয়?
জাফরান উদ্ভিদ বেশি জন্মে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে। এছাড়াও আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তুরস্ক, মিশর, ইরান ও চীনে জাফরান চাষ হয়। এমনকি আমেরিকার কিছু এলাকাতেও জাফরানের চাষ হয়। আমেরিকায় যদিও জাফরান খাওয়ার তেমনটা রীতি নেই, তবে দামি মসলা বলে সেখানে জাফরানের কদর রয়েছে। ২০১৩ সালে আমেরিকা প্রায় ২৫ টন এবং ২০১৬ সালে প্রায় ৪৬ টন জাফরান আমদানি করেছে। বিশ্বে ইরানি জাফরানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। বর্তমানে বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রায় ৯০% অংশ ইরানে উৎপাদিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়ন কপোরেশনের উদ্যোগে গাজীপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর, পাবনা, রংপুর, খুলনা ও বান্দরবানে কিছু এলাকায় জাফরান চাষ স্বল্প পরিসরে শুরু হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশে যে আবহাওয়া তা জাফরান চাষের জন্য অনুকূল বলেই মনে করেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও কৃষিবিদরা।
ইতালি, ইরান আর স্পেন বিশ্বের সর্ববৃহৎ জাফরান উৎপাদনকারী দেশ হলেও ইরান একাই বিশ্বজুড়ে জাফরানের ৯০ শতাংশের জোগান দেয়। ইরানে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জাফরান উৎপাদনের কারণ হচ্ছে সেখানে অল্প বেতনে অধিকসংখ্যক কর্মী পাওয়া যায়। ইরানের বেশির ভাগ এলাকায় কর্মীরা ফার্মে কাজে আসেন ভোর ৫-৬টার মধ্যে, এরপর প্রায় বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা তাদের কাজ করতে হয়। জাফরান সংগ্রহে নিয়োজিত বেশিরভাগই নারীকর্মী। তাদের সর্বোচ্চ বেতন দিনে ৫ ডলার।
জাফরান চাষ এবং সংগ্রহ পদ্ধতি অত্যন্ত নিখুঁত। তাই এই কাজের জন্য দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন। ভারমন্ট ইউনিভার্সিটির পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট আরাশ গালেহগোলাব্বেহবাহানি বলেন, “জাফরান হচ্ছে ডিহাইড্রেটেড বা শুকনো গর্ভমুণ্ড। এটি ফুলের স্ত্রী অংশ। এই গর্ভমুণ্ডকেই আলাদা করে শুকিয়ে নিতে হয়। আর এসব পদ্ধতি সম্পন্ন করার জন্য শ্রমিকদের হাতের প্রয়োজন হয়।”
অনেক দেশেই (যেমন: আফগানিস্তান, মরক্কো) জাফরান ক্রোকাস ফুল সংগ্রহ করা হয় ভোরবেলায়, তা না হলে সূর্যের অতিরিক্ত তাপে ফুল নষ্ট হয়ে যায়। এই ফুল বছরে মাত্র একবারই চাষ করা যায়। প্রতিটি ফুলে মাত্র তিনটি সুতার মতো চিকন গর্ভমুণ্ড পাওয়া যায়। একবার গাছে ফুল এসে গেলে, ফুল থেকে জাফরান সরানোর কাজ শুরু করেন শ্রমিকরা। ১ পাউন্ড অর্থাৎ ০.৪৫ কেজি জাফরান সংগ্রহ করতে শ্রমিকদের প্রায় ৪০ ঘণ্টা সময় লাগে।
এই মসলা চাষ করা যে শুধু কঠিন তা-ই নয়, একা একা বড়ো হওয়াও এর জন্য বেশ বড়ো একটি চ্যালেঞ্জ। অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ফুল ফোটে, ফুলের জন্য প্রয়োজন হয় প্রচুর রোদ, গরম আবহাওয়া আর পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা। ফুল তোলার পদ্ধতিটিও খুব সহজ নয়। মাটি থেকে মাত্র ছয় ইঞ্চি উচ্চতার হয় ফুলগুলো। এগুলো তোলার জন্য তাই শ্রমিককে ঝুঁকতে হয়। প্রায় ছয় ঘণ্টা বসে বা কুঁজো হয়ে ফুল তুলতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই এত দীর্ঘ সময় এই কাজ করা যে-কারো পক্ষেই কষ্টদায়ক।
জাফরান মসলা
জাফরন ফুলের প্রাণবন্ত গাঢ় লাল রঙের এবং শৈলীর গর্ভমুণ্ড, যাকে জাফরন আঁশ বলা হয়। সংগ্রহ এবং শুকানোর মাধ্যমে জাফরন মশলা তৈরি করা হয় যা প্রধানত খাবারের স্বাদ এবং রঙের জন্য ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে ওজন এর দিকে দিয়ে জাফরন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মসলা। জাফরানের স্বাদ এবং খড়ের মতো সুবাসের উৎপত্তি হয় রাসায়নিক জৈব যৌগ পিক্রক্রোছিন এবং সাফ্রানল থেকে।আবার জাফরনে ক্যারোটিনয়েড রঙ্গক এবং ক্রসিন রয়েছে, যা খাবার এবং কাপড়ে সোনালি-হলুদ রঙ এর সৃষ্টি করে।
জাফরান বীজ
এটি একটি নির্বীজ বহু ক্রোমোজোম বিশিষ্ট প্রজাতি, যার অর্থ হচ্ছে প্রতিটি প্রজাতির জীন তিনটি সমস্থানিক সেট এর ক্রোমোজোম দ্বারা গঠিত; সি সাটিভাস এর প্রতি সেটে ৮ টি ক্রোমোসোমাল বহন করে, সর্বমোট যাতে ২৪ টি ক্রোমোজোম পাওয়া যায়। নির্বীজ হবার কারণে সি সাটিভাস কার্যকর বীজ উৎপাদন করতে ব্যর্থ; পরাগায়নের জন্য মানব সহয়তার প্রয়োজন; অর্থাৎ ভূগর্ভস্থ, কন্দ এর মত দেখতে জাফরন গাছের কাই-সংরক্ষণকারী অঙ্গ অর্থাৎ এর কাণ্ডগুচ্ছ সমূহকে অবশ্যই খুঁড়ে তুলে ভাগ করতে হয় এবং পুনঃরায় মাটিতে রোপন করতে হয়। একটি কাণ্ড মাত্র এক মৌসুম বেঁচে থাকে, যার ফলে পরবর্তী মৌসুমে চাষ করার জন্য একে উদ্ভিদভিত্তিক বিভাগের মাধ্যমে দশটি "কাণ্ড" উৎপাদন করতে হয় এই সংক্ষিপ্ত কাণ্ডগুলি সাধারনত ছোট, বাদামী রঙের হয় যার ব্যাস ৫ সেমি (২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে থাকে, এটি সমতল হয়ে থাকে, এবং সমান্তরাল আঁশ দ্বারা ঘনসন্নিবেশিত হয়; এই আঁশসমুহকে "কাণ্ড ঝিল্লী" বলা হয়। কাণ্ডগুলিতে আবার , পাতলা এবং জাল এর মতো খাড়া আঁশ থাকে, যা উদ্ভিদ এর ঘাড় উপরে ৫ সেমি (২ ইঞ্চি) পর্যন্ত বাড়তে থাকে। জাফরান গাছের ৫-১১ দিন বয়সী সাদা এবং অ-সালোকসংশ্লেষী অঙ্কুর গুলো দেখতে কচি পাতার মতো হয়ে থাকে।
এই ঝিল্লি-মত কাঠামোগুলি ৫ থেকে ১১ দিন বয়সী নতুন পাতাগুলিকে ঢেকে রাখে এবং রক্ষা করে যা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে এবং বেঁকে যায়। পরবর্তীতে পাতাগুলো পাতলা, সোজা ধার বিশিষ্ট সবুজ রঙের হয়ে থাকে, যা্র ব্যাস ১–৩ মিমি (০.০৪–০.১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে, ,এবং যা গাছের ফুল ফোটার পর খোলে বা ছড়িয়ে পরে("হাইটস্টারথাস") অথবা ফুল ফোটার সাথে সাথে তারা ছড়ায় ("সিনানথোস")। কিছু লোক ধারণা করে যে, সি. স্যাটিভাস প্রজাতীর গাছের অঙ্কুর তার চাষমৌসুমের আগে চাশাবাদ শুরু করলে তার পাতাসমূহ ফুল ফোটার আগেই ছড়িয়ে পরে। এই গাছের ফুল বহনকারী কাঠামো বা কাণ্ডে ব্র্যাক্টোলেস বা বিশেষ ধরনের পাতা গজায় যা ফুলের বোঁটা থেকে অঙ্কুরিত হয়া যা পত্রবৃন্ত হিসাবে পরিচিত হয়। বসন্তে মুকুল এর পত্রবিন্যাসের পর, উদ্ভিদ তার আসল পাতা গজায়, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ সেমি (১৬ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে। শুধুমাত্র অক্টোবরে, অধিকাংশ উদ্ভিদ তাদের বীজ ছেড়ে দেইয়ার পর তাদের উজ্জ্বল বর্নের ফুল তৈরি করে; যাদের রঙ হালকা বেগুনী রঙের বর্ণ থেকে বিলেখিত ফিকে লাল রঙের বর্ণের হয়ে থাকে। ফুলের সুবাস একটি মিষ্টি, মধুর মত হয়ে থাকে। ফুল ফোটার পর, গাছের উচ্চতা ২০–৩০ সেমি (৮–১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং যাতে সংখ্যায় ৪টি ফুল ধারণ করতে পারে। প্রতিটি ফুল থেকে একটি তিন প্রান্তিক গর্ভমুণ্ড বের হয় যা দৈর্ঘ্যে ২৫-৩০ মি.মি. (১-১.২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতিটি প্রান্তিক গাঢ়লাল রঙের গর্ভমুন্ডে গিয়ে শেষ হয়, যা ফুলের গর্ভপত্র এর দূরবর্তী অংশ।
কোয়েল পাখি চাষ ও ডিমের উপকারিতা
জাফরান চাষ হয় কোন মাটিতে
জাফরন ক্রোকাস, সম্ভবত ক্রোকাস কার্ট্রাইটিয়ানাস থেকে উদ্ভদ হয়েছে যা বন্য পরিবেশে জন্মায় না। এটি একটি বহু ক্রোমোজোমক্রোমোজোম বিশিষ্ট যা "স্ব-অসঙ্গতিপূর্ণ" এবং পুরুষ নির্বীজ; এই ঊডভীডে বিচ্যুত কোষ বিভাজন হয় ও স্বাধীন ভাবে বংশবৃদ্ধি করতে অসমর্থ হয় যার ফলে বাহ্যিক "বিভাজন এবং স্থাপন" বা আন্তঃপ্রজাতী শঙ্করীকরণের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করতে হয়।
ক্রোকাস সাটিভাস ব্যাপক হারে বেড়ে উঠে ভূমধ্যসাগরীয় জীবাঞ্চল এলাকায় যা বৈশিষ্ট্যর দিক থেকে উত্তর আমেরিকার জীবাঞ্চলের মতো এবং একই রকম জলবায়ু বিষিষ্ট অঞ্চল বিশেষ করে যে এলাকায় গরম ও শুষ্ক গ্রীষ্মকালীন মৃদুমন্দ বাতাস অর্ধ-শুষ্ক ভূমির উপর দিয়ে বয়ে যায়। তা সত্ত্বেও এই গাছ শীতকালীয় ঠান্ডা আবহাওয়ায় বেঁচে থাকতে পারে, বিশষ করে −১০ °সে (১৪ °ফা) তাপমাত্রার হিম বাতাস সহ্য করার পাষাপাশি সংক্ষিপ্ত সময়ের তুষারপাতও সহ্য করতে পারে কাশ্মীরের মতো আর্দ্র পরিবেশের বাইরে জাফরনের চাষ করতে হলে সেচের প্রয়োজন হয় বিশেষ করে যেখানে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ১,০০০–১,৫০০ মিমি (৩৯–৫৯ ইঞ্চি) এবং গ্রীসের (৫০০ মিমি অথবা ২০ ইঞ্চি)ও স্পেনের (৪০০ মিমি অথবা ১৬ ইঞ্চি) জাফরান চাষের ক্রমবর্ধমান অঞ্চল সমূহ যা ইরান এর প্রধান প্রধান জাফরান চাষের অঞ্চলের চেয়ে অনেক শুকনো। এইসব স্থানে জাফরান চাষ সম্ভব হয় সাধারনত উপযুক্ত সময়ে বর্ষা ঋতুর আগমনের কারণেন এবং বসন্তে খুবই ভালো পরিমান এর বৃষ্টি ও গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া অনুকূল শুষ্ক হবার কারণে। ফুল ফোটার আগে বৃষ্টি হলে প্রচুর পরিমানে জাফরন উৎপন্ন হয় তবে ফুল ফোটার সময় বৃষ্টি ও ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে ফুল রোগাক্রান্ত হয় এবং জাফরানের উৎপাদন কমে যায়। টানা আর্দ্র এবং গরম আবহাওয়ার ফলে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং খরগোশ, ইঁদুর এবং পাখি দ্বারা মাটি খুঁড়ে জাফরন কাণ্ড বের করার ফলে ফসলের ক্ষতি হয়। নিমাতোডা[প্রাণী] গনের প্রাণী দ্বারা,পাতায় ফাংগাস এর আক্রমণ এবং কাণ্ডে পচনের কারণেও ফসলের ক্ষতি হয়। তবুও বেসিলাস সাবটিটিস প্রজাতির গাছের কলমের কারণে চাষিদের জাফরনা চাষ লাভজনক হয় কারণে এতে কাণ্ড দ্রুত বেড়ে উঠে এবং ভালো পরিমানে জাফরনে ফুলের গর্ভমুণ্ড তৈরি হয়।